আমাদের কথা

শাকবোল

শাকবোল গানের প্রথম সন্ধান আমি পাই আমাদের জেলার বিশিষ্ট নাট্যকার শ্রীপরিমল ত্রিবেদীর উদাস পূজা নাটকে। নাটকে রাখাল বালকেরা শাকবোল গাইছে—

“এ পারেতে বোগলা গো চড়ে/খায় কুসুমের ফুল।/জগজীবন হে রাম।।//

ও পারেতে গিধনি গো উড়ে/হামরা দেখি কূল।/জগজীবন হে রাম।।//

জগৎ রানি সিয়ান যে করে/খোঁপার খোঁপার চুল।//

জগজীবন হে রাম।।” (পরিমল ত্রিবেদী, নির্বাচিত নাট্য সংকলন, প্রয়াগ, ২০১১, পৃ. ৩৮।)

নাটকের আরও এক জায়গায় ভিন্ন ধরনের ব্যবহার লক্ষ করি।

“এল্যাম রে ভাই গিরমের বাড়ি/হালফাল মোজমদারি।/হালফাল সিতানে থুয়্যা/চোর প্যাল্যালো ধুর ধুরিয়্যা।।/

ওরে চোর কি লিয়্যা/বটগাছের ডাল লিয়্যা,/সেই ডাল জোগ্যালাম রে/চাম্পার ফুল ভ্যাসালাম রে।/সোনারায়ে দিলে বর/ফর ফর ফর ফরাৎফর।।” (পরিমল ত্রিবেদী, পূর্বোক্ত, পৃ. ৪০।)

এই নাম না জানা লোকগানের প্রতি আকর্ষণ তীব্র হয়। বিশেষ করে ‘শাকবোল’ শব্দটির প্রতি! বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক পুষ্পজিৎ রায় মহাশয়ের নিকট এই গানের বিষয়ে আমার আগ্রহ প্রকাশ করি। তিনি আমায় বলেন, ‘শাকবোল’-এ ‘শাক’ এসেছে ‘শাঁখ’ থেকে। আর ‘বোল’ মানে আওয়াজ বা শব্দ।‘শাকবোল’ শব্দের এই অর্থ শুনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়। একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভাবছিলাম। পত্রিকার নামও দিয়ে ফেলি শাকবোল (পত্রিকাটি ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মুদ্রিত আকারে প্রকাশ পায়) পত্রিকার প্রস্তুতি সংখ্যায় পুষ্পজিৎ রায় মহাশয়কে অনুরোধ করি ‘শাকবোল’ বিষয়ক একটি প্রবন্ধ লিখবার। তাঁর লেখা ‘শাকবোলের কথা’ শিরোনামাঙ্কিত প্রবন্ধ থেকে জানতে পারি— একএক এলাকায় কোনো বিশেষ মাস বা ঋতুতে গ্রামের রাখাল বালক, কিশোরেরা সোনারায়ের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে এবং দলবদ্ধভাবে শাঁখ বাজিয়ে ছড়া ও গান সহযোগে লোকের বাড়ি বাড়ি ‘মাঙ্গন’ চাইত। এই ক্রিয়াকলাপের নাম হল, শাকবোলের ছড়া বা শাকবোলের গান। যাকে সোনারায়ের গান-ও বলা হয়।মালদা জেলার ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদা, কালিয়াচক, মানিকচক থানার এলাকায় সোনারায়ের পূজানুষ্ঠান হত। এই পূজা হত পৌষ মাসে। গ্রামের কোনো জায়গায় বেদি বানিয়ে, তার পাশে জিওল গাছে ডাল পোঁতা হত। এই পূজায় কোনো মূর্তি নেই। পুরোহিতেরও বালাই নেই। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, এই পূজা করলে গৃহস্থের কল্যাণ হয়। বাড়ির জীব-জন্তুদের কোনো আপদ-বিপদ হয় না। পুষ্পজিৎ মহাশয়েরা মানিকচকে গিয়েছিলেন ক্ষেত্রসমীক্ষাকরতে, গ্রামের মানুষ কিন্তু ছড়াগানগুলিকে সোনারায়ের বলতে চাননি। শাকবোল গানই বলেছেন। পুষ্পজিৎ মহাশয়ের কথায়, ‘জেলার অনেক এলাকা ছিল অরণ্যসংকুল। বাঘ তো ছিলই, আরও অনেক হিংস্র জন্তু-জানোয়ার থাকত। গ্রামবাসী এবং তাদের গোরু-ছাগল আক্রান্ত হত।… এই পরিস্থিতিতে আমরা শাঁখের বোলের কথা ভাবব। শাঁখ আমাদের দেশের এক পুরোনো বাদ্য যন্ত্র।… শাঁখের সামাজিক ভূমিকার কথা আমরা সবাই জানি।… শাকবোলের দল গ্রামবাসীকে সতর্ক করার জন্য শাঁখ বাজাতো।’ (পুষ্পজিৎ রায়, ‘শাকবোলের কথা’, শাকবোল, ২০১৮, পৃ. ৪।)

শাকবোল প্রকাশকালে অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন এই ‘শাকবোল’-এর কী অর্থ? কেন বা এরকম নাম? আসল কথা হল, শাকবোলের দলের এই যে বাঘ বা হিংস্র জীবযন্তুদের থেকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করার ব্যাপার, এই ব্যাপারটি সবসময় আমাকে দারুণ আন্দোলিত করে। আমি এইসব নানা জাতীয়ের দ্বারাই কেবল ‘অনুপ্রাণিত’ হই। তাই পত্রিকার এই নাম আমি দিয়ে ফেলেছি। পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে কোনো বাঘ বা হিংস্র জন্তুসদৃশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করব? না কি সাধারণ মানুষকে কোনো শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করব? কী জানি! আপনারাও কি শাকবোল-এর সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল হবেন? জানি না। সময়ে ঠিক বোঝাপড়া হবে… সবে তো শুরু…শাকবোল (পি) ও ‘ই’ দুই-ই হলো। না মরেনি। অন্যভাবে ফিরে এসেছে!

Editor-In-Chief

Dr Biplab Chakraborty

Ph.d. (Bengali), Assistant Professor, Department Of Bengali, Malda College, Malda, West Bengal, Pin: 732101

Board Of Editors

Prof. Sauren Bandyopadhyay

Ph.d. (Bengali), Professor, Department Of Bengali & Dean, Faculty Council Of Arts & Commerce, University Of Gour Banga, Malda, West Bengal, Pin:732103

Dr Mahasweta Ray

Ph.d. (Bengali), Associate Professor, Department Of Bengali, Malda College, Malda, West Bengal, Pin:732101

Dr Manas Kumar Baidya

M. Com., Ph.d., Principal, Malda College, Malda, West Bengal, Pin: 732101

Dr Barun Mandal

Ph.d. (Bengali), Assistant Professor, Department Of Bengali, Panchakot Mahavidyalaya, Sarabari, Neturia, Purulia, West Bengal, Pin: 713324

Sri Mithun Ray

M.sc. in Geography, Assistant Professor, Department of Geography, Malda College, Malda, West Bengal, Pin: 732101