সম্পাদকীয়
— ওর লেখা ছাপাব না…
— আমি তোমার লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেবো…
— ওর লেখা বন্ধ করে দেবো।
এই সময় দাঁড়িয়ে যারা এই ধরনের অর্বাচীন কথা বলছে তাদের মানসিক সুস্থতা বিষয়ে প্রশ্ন অবশ্য তোলা যায়। লেখকের অভাব নেই। পত্রিকার অভাব নেই। ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেখক তৈরি হয়ে গেছে আজকের দিনে। একটা ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে যেমন ভালো ছবি দেখানো যায় দর্শকদের, তেমনি একজন লেখক কোনো পি/ই পত্রিকায় না লিখে হ্যাংলামি না করে একটা ব্লগ বানিয়ে সাহিত্যচর্চা করতে পারে। পাঠকের সঙ্গে সংযোগ গড়তে পারে।
নিজের টাকায় বই লিখে, তারপর সেই বই প্রকাশের পর লেখকের কত্ত হয়রানি…
উদ্বোধনের নামে কমপক্ষে ৫০-টা স্তাবক ডাকতে হয়
ন্যাকামি করে বইয়ের রিভিউয়ের ভিখ মাগতে হয়
যার নামে চুকলি কেটেছিলি তাদের ফোন করে নাকিকান্না কাঁদতে হয়
তারপর দাঁত কেলিয়ে ছবি পোস্টাতে হয়
[আরও অনেক আছে…]
স্তাবকরাও এসে ‘আহা আহা’, ‘উহু উহু’ করে
তারপর পেছনে যা বলার তাই বলে যায়।
এইসব দৃশ্য খুব দ্রুত মুছে যাবে।
একটা বিকল্প মাধ্যম তৈরি হয়ে গেছে। শাকবোল ই জার্নাল এই আন্দোলনের শরিক।
পত্রিকার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যার আকর্ষণ— ক্রোড়পত্র: রবীন্দ্র গুহ। রবীন্দ্র গুহ বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে শুরু হওয়া নিমসাহিত্য আন্দোলনের একজন প্রধান শরিক। এই সাহিত্য— ‘না-সাহিত্য অল্প-সাহিত্য তিক্তবিরক্ত-সাহিত্য’। রবীন্দ্র গুহ একাধারে কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। প্রবন্ধও লিখেছেন।
এই ক্রোড়পত্রে আমাদের বিশেষ সহায়তা করেছেন সাহিত্যিক অজিত রায়। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু, এই প্রকাশ দেখে যেতে পারল না। আমরা এই সূচনা সংখ্যায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। রবীন্দ্র গুহের সাক্ষাৎকার ওঁর নেওয়া। একটি প্রবন্ধও উনি লিখেছেন এই সংখ্যায়। এছাড়াও এই সমগ্র সংখ্যা প্রকাশে সাহিত্যিক শতানীক রায়ের প্রধান ভূমিকা রয়েছে। ওকে জানাই ভালোবাসা।
এছাড়াও এই পত্রিকায় রয়েছে ‘বিবিধ’ অংশ। সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতিবিষয়ক প্রবন্ধ সেখানে স্থান পেয়েছে।
যাঁরা পত্রিকার ‘বিবিধ’ অংশ এবং ‘ক্রোড়পত্র’ অংশের জন্য আমাদের প্রবন্ধ প্রেরণ করেছিলেন, তাঁদের প্রবন্ধ প্রকাশে আমরা বিশেষভাবে ধন্য। ধন্যবাদ জানাই রাজদীপ পুরী, সুপ্রসন্ন কুণ্ডুকে। রাজদীপ দাদা ওয়েবসাইট নির্মাণ করেছেন। সাজিয়ে দিয়েছেন। সুপ্রসন্ন দাদা প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন।
শাকবোল ই জার্নাল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ষাণ্মাসিক পত্রিকা। শাকবোল নিজের নিয়মে এগিয়ে যাবে। সাহিত্য-সংস্কৃতির মুখোশ পরা ফ্যাসিস্টদের এই পত্রিকা থেকে কিন্তু দূরে থাকাই ভালো।
একটা কথা অবশ্য জেনে রাখা দরকার—
শাকবোল মানুষ ভালোবাসে। পথ গাছ পাখি জল ভালোবাসে। আলো ভালোবাসে। মানুষের সঙ্গে মানুষের বিচ্ছন্নতার কথা সে কিন্তু বলছে না। সেই বিশ্বাস সে কখনওই করে না। মানুষ হয়ে মনুষ্যধর্মকে যারা কলঙ্কিত করে, আর ছদ্মপাঠক লেখক সেজে যারা ঘুরে বেড়ায়, সেই ভাঁড়েদের থেকে শাকবোল দূরে থাকতে চায়।
বিপ্লব চক্রবর্তী
তারিখ: ২৮/০২/২০২২
স্থান: সত্যকুটির, সুভাষপল্লি, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।