অসভ্য কৃষকের অসভ্য কথা

কা না ই  চৌ হা ন

যে চুষে খায় সে শীর্ষে স্থান পায়/ দানবীর পদধূলিতে মিশে যায়

ভারতবর্ষ আজ উন্নত থেকে উন্নতিশীল পথের দিকে ধাবিত। তবে যদি প্রশ্ন করা হয়, এই উন্নতিটা আসলে কার? বা কাদের? দেশের না দশের! উত্তর অবশ্যই দেশের, কিন্তু পুরোপুরি দশের নয়; দশের মধ্যে দুই বা তিনের। এই দুই-তিনজনের উন্নতিতেই দেশের বা দশের উন্নতি! আর বাকিরা, বিশেষ করে কৃষকেরা সভ্যতার আদি পর্ব থেকে যে অবস্থায় প্রতিপন্ন হয়েছে, আজও সেই একই অবস্থায় বিচরিত। আমার কথা অবিশ্বাস্য হলেও চির-বিশ্বাসী বঙ্কিমবাবুর কথায় স্মরণ করে বলি—

যত দিন হইতে ভারতবর্ষের সভ্যতার সৃষ্টি, প্রায় তত দিন হইতে ভারতবর্ষীয় কৃষকদিগের দুর্দ্দশার সূত্রপাত।” [বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবিধ প্রবন্ধ, ‘বঙ্গদেশের কৃষক’।]  

একবিংশ শতাব্দীতেও সেই একইকথা খাটে। বর্তমান ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার প্রায় বাহান্ন শতাংশই কৃষকশ্রেণি। আমরা যদি শুধুমাত্র গ্রামীণ এলাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরি তাহলে দেখতে পাব প্রায় বাহাত্তর শতাংশ মানুষ-ই কৃষি-কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের বিরাট একটা অংশের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও দেশের ক্রমাগত শ্রীবৃদ্ধি থেকে তারা বিচুত্য। বিছিন্ন। অথচ নিরন্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। সেখানে সকলেই অংশীদার, কৃষক বাদে। 

“শ্রীবৃদ্ধিতে রাজা, ভূস্বামী, বণিক, মহাজন সকলেরই শ্রীবৃদ্ধি। কেবল কৃষকের শ্রীবৃদ্ধি নাই।” এহনে বঙ্কিম বাবু প্রশ্নও তুলেছেন— “দেশের মঙ্গল? দেশের মঙ্গল, কাহার মঙ্গল? তোমার আমার মঙ্গল দেখিতেছি, কিন্তু তুমি আমি কি দেশ? তুমি আমি দেশের কয় জন? আর এই কৃষিজীবী কয় জন? তাহাদের ত্যাগ করিলে দেশে কয় জন থাকে?” [বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবিধ প্রবন্ধ, ‘বঙ্গদেশের কৃষক’।] 

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষলগ্নে যখন করোনা ভাইরাস বিশ্বকে মহামারির কালো হাতছানিতে ঘিরে ফেলে তখন সর্বজাতি, সর্বশ্রেণি আত্মরক্ষা হেতু নিজেদের গৃহবন্দি বা তালা বন্দি করে নেয়, একমাত্র কৃষকশ্রেণি ব্যতীত। বিশ্বে যত বড়ই আপদ চলে আসুক না কেন এই অসভ্য কৃষকেরা কখনই নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখতে পারে না। যদি কোনো কারণবশত কৃষকদের গৃহবন্দি হতে হয় তবে দেশসহ বিশ্ব দুর্ভিক্ষ ও হাহাকারে পরিণত হয়ে পড়বে। যদি বিশ্বাস না হয় তো আপনি এই অসভ্য কৃষকের দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ঘরে তোলা বন্ধ করে দিয়ে দেখুন!

শুধু করোনাতেই শেষ নয়, এরা কোন আঘাতকেই ভয় করে না। এরা ভয় করে পেটকে, পেটের জ্বালাকে। শুধু নিজের না আরও দশজনের, আমার, আপনার ও তাদেরও! যে তাদের সর্বদা পদতলে স্থান দেয়, তাদেরও পেটের চিন্তা করে এরাই! এরা নিজে মরে অন্যের মঙ্গলের জন্য, এদের মঙ্গল কেউ ভাবে না। আজ ভারতবর্ষের মঙ্গলের জয়গাথা বিশ্বব্যাপী গাইছে, তবে মঙ্গলটা কার ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। যেখানে ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের উপরেই কৃষকশ্রেণি, যাদের গড় বার্ষিক আয় সাতাত্তর হাজার টাকা মাত্র (৭৭,০০০/-), আর এই সাতাত্তর হাজার টাকা আয় করতে তাদের গড়ঋণ করতে হয় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা (১,৪০,০০০/)। তবে দেশের মঙ্গল হচ্ছে অগাধ, দেশের শ্রীবৃদ্ধিও ঘটছে বুলেট ট্রেনের ন্যায়! তবে এই শ্রীবৃদ্ধিটা কার? এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে চিরকাল থেকে! আজ তা নতুন নয়। বঙ্কিমবাবুর দু-চারটি কথা স্মরণ করি—

কাহার এত মঙ্গল? হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্ত্ত দুই প্রহরের রৌদ্রে, খালি মাথায়, খালি পায়ে এক হাঁটু কাদার উপর দিয়া দুইটা অস্থিচর্ম্মবিশিষ্ট বলদে, ভোঁতা হাল ধার করিয়া আনিয়া চষিতেছে, উহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে? উহাদের এই ভাদ্রের রৌদ্রে মাতা ফাটিয়া যাইতেছে, তৃষায় ছাতি ফাটিয়া যাইতেছে, তাহারা নিবারণজন্য অঞ্জলি করিয়া মাঠের কর্দ্দম পান করিতেছে; ক্ষুধায় প্রাণ যাইতেছে, কিন্তু এখন বাড়ী গিয়া আহার করা যাইবে না, এই চাষের সময়। সন্ধ্যাবেলা গিয়া উহারা ভাঙ্গা পাতরে রাঙ্গা রাঙ্গা বড় বড় ভাত, লুন, লঙ্কা দিয়া আধপেটা খাইবে। তাহার পর ছেঁড়া মাদুরে, না হয় ভূমে, গোহালের এক পাশে শয়ন করিবে— উহাদের মশা লাগে না।” [বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবিধ প্রবন্ধ, ‘বঙ্গদেশের কৃষক’।] 

এত হাড়ভাঙা মেহনতের পরেও তারা তাদের উৎপাদিত ফসল আমাদের প্রায় একপ্রকার বিনামূল্যতেই দিয়ে দেয়। বিনামূল্যের কথা শুনে অনেকেই হয়তো আমাকে গালিগালাজ করবেন, অনেকে হয়তোবা পাগল, বেকুফ-এর উপাধি দিয়ে ফেলেছেন! আপনারা তো মূল্য দিয়েই ক্রয় করেন, এবং যথেষ্ট মূল্য দেন। আপাতত একটি কথা বলে রাখি, আপনি যে মূল্য দিয়ে কৃষকের ফসল ক্রয় করেন তার অর্ধেকও যদি কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারত তাহলে তাদের আয় বর্তমানের আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যেত। আপনি কি জানেন এক কেজি মোটা চাল উৎপাদনের পিছনে কত টাকা ব্যয় করতে হয়? পাঁচ, দশ, পনের খুব বেশি হলে কুড়ি টাকা? এমন যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার জন্য একটি ছোট্ট হিসেব দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, আসলে এক কেজি চাল উৎপাদনে আনুমানিক কত টাকা ব্যয় করতে হয়—

বীজ ও বীজতোলা: বীজের দাম + সার – বিষ, গোবর ও হালের খরচ + লেবার মজুরি দিয়ে (বীজ তুলে চাষের জমিতে পৌঁছে দেওয়া আবধি) মোট খরচ ৩.৮০ টাকা। 

সার ও বিষ: চাষের জমিতে সার ও বিষের খরচ— ৯.৮৭ টাকা।

চাষ: ২.৫০ টাকা।                  

জল: শুদ্ধ পানিয় জলের প্রয়োজন হয় আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৮ লিটার। কারণ খার জল দিয়ে ধান চাষ হয় না। যে জল প্লাস্টিকের বোতলে ভোরে ২০ টাকা লিটার হিসেবে বাজারে বিক্রয় করা হয়ে থাকে, সেই জলের মূল্য অর্ধেকের অর্ধেক ধরে নিলেও তার দাম দাঁড়ায় ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। অর্থাৎ ২২০.০০ টাকা।

মজুরি: রোপাণ + নেলানি + কাটানি + ঝাড়ানো ও ইত্যাদি— ১২.৫০ টাকা। 

ধান থেকে চাল:  ধানকে ছত্রিশ থেকে আটচল্লিশ ঘণ্টা শুদ্ধ জলে ভেজাতে হয়, তারপর সিদ্ধ করতে হয়, এরপর দুই দিন কড়া রৌদ্রে শুকাতে হয়, তারপর চব্বিশ ঘণ্টা রেস্ট দিয়ে মিলে নিয়ে গিয়ে ভাঙাতে হয়। এইমুহূর্তে মিল থেকে যে চাল বের হয় তা খাবার উপযুক্ত নয়, কারণ চাল থেকে ধানের গুড়াকে আলাদা করতে, তা যন্ত্রের দ্বারাও বের করা যায়, আবার কুলা হাঁকিয়েও বের করা যায়। এত কিছু করতে এর পিছনে যা খরচ হয়— ৩.৭৫ টাকা। 

বহন: মিল>বাড়ি>বাজার ১.০০ টাকা।

খাজনা, ভাঙা ও ইত্যাদি: ২.৫০ টাকা। আনুমানিক মোট ব্যয় ২৫৫.৯২ টাকা। সরকারি দাবির নিয়মানুযায়ী মূল ব্যয়ের সঙ্গে ১.৫০ টাকা গুণ করে MSP (Minimum Support Price) তৈরি করা হয়। তাহলে সেই এক কেজি চালের বিক্রয় মূল্য দাড়ায়, ২৫৫.৯২ x ১.৫০টাকা= ৩৮৩.৮৮ টাকা।

সেই এক কেজি চাল অসহায় প্রাণীর মতো কোনো এক মান্ডিতে কিংবা কোনো কপটিইয়া মাহাজনের গুদামে দিয়ে আসতে হয় ২১.০০ থেকে ২২.০০ টাকার মধ্যে। সেই এক কেজি চাল উৎপাদন করতে কৃষককে প্রতি মূহর্তে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে যেতে হয়। সে ফসল কখনো বন্যায় ভেসে যায়, কখনোবা খরায় পুড়ে যায়। সেই ফসলকে রক্ষা করতে কৃষক নিজেকে বিলিয়ে দেয় বান-বন্যা-বজ্রের হাতে। তবে আমাদের সমাজের কিছু সভ্য লোক বুঝে উঠতে পারে না যে, এই অসভ্য কৃষকেরা আত্মহত্যা করে কেন! একটা পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, ১৯৫০-এর কৃষকের তুলনায় আজকের কৃষকের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় একুশ গুণ (অনিশ্চিতভাবে), অন্যদিকে একজন সরকারি কর্মচারীর মাথা পিছু আয়ের বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় একশত আশি গুণ (নিশ্চিত), আর সেখানে এক জন শিক্ষকের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুইশত গুণ (নিশ্চিত) পেরিয়েছে। আজ যদি একজন কৃষকের আয়ের ন্যায় একজন সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষকের আয় বৃদ্ধি ঘটত, তবে তাদের মাসিক আয় দাঁড়াত আনুমানিক ছয় হাজার থেকে নয় হাজারের মধ্যে। সভ্যেরা একটু ভেবে দেখুন এই অসভ্য কৃষকেরা আত্মহত্যা করে কেন!

আমরা সভ্যেরা সেই চালের মূল্য তো দিতেই পারি না, শুধুমাত্র তাদের কায়িক পরিশ্রমের মূল্য দিতেই বেজার। অনেকে তো আবার আন্দোলনে বসে পড়েন! কিন্তু যখন একজন সাধারণ কৃষক উচিতমূল্যের অভাবে তার ফসল বিক্রয় না করতে পেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে কিংবা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয়,  তখন তো কেউ আন্দোলনে বসে না! চুপচাপ এক হাতের উপর অন্য হাত রেখে সন্তানের লালামিশ্রিত চুমুর চরম শান্তির অনুভবে ডুবে থাকেন। সে যাইহোক, এ তো হলো মোটা চালের হিসেব। আমি কিছুজনের কাছে শুনেছি যে, কিছু সভ্যলোকের পেটে নাকি মোটাচালের ভাত হজম হয় না।

বাইশ বেয়াল্লিশের খেলা: 

এর পর শুরু হয় এক রঙিন খেলা! বাইশকে বেয়াল্লিশ-বাহান্ন করার খেল। আমাদের পুরে প্রায় চল্লিশ ঘর ছোটো চাষির বাস। যারা প্রথম ফসলের উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় ফসল বুনন করে। ধরা যাক প্রথম ফসলে ধান ছিল, এরপর তারা গম বা সরিষা রোপণ করবে। সেই গম বা সরিষা রোপণ করার পূর্ব খরচের কারণে তার প্রথম ফসলের প্রায় অর্ধেক ধান বিক্রয় করে দিতে হয়। যদি সে প্রথম ফসল বিক্রয় না করে, তাহলে তারপক্ষে দ্বিতীয় ফসলটি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অথবা কোথাও  ঋণ গ্রহণ করে, প্রথম ফসলকে রক্ষা করাতে পারলেও দ্বিতীয় ফসলের অবশেষ কিছুই থাকে না। সে-কথা যাকগে, আজ যিনি মহাজনের গুদামে বাইশ টাকা দরে চাল বিক্রয় করলেন, তিনিই যদি পরেরে দিন সেই মহাজনের দোকানে গিয়ে চালের বাজার মূল্য জিজ্ঞাসা করেন, তখন যা হয় সাধারণত— 

‘বাবু দু কেজি চাউল দেও, কি দরছে? 

‘বত্তিশ করে বিক্রি করসি, যা তু তিশ করে দিস।’

‘কেনরে বাপু! দো’দিন আগে তোরঠে তো বাইশ করকে দিয়ে গেনু, আজ কেনবা তিশ চাইস! এনা কম করেক।’

‘কি দর লিসি, না লিসি তা তোক কবা হবেক নাই, লাখ লাখ টাকাহ খাটোসে চারটা বান্দাজন খাটোসে, মাঙনাই নাকি, তু বাপু বেজার হোসনা, নিলে নে না হলে যাগে। এটে ঝেমলা পাকাস না।’ 

অবশেষে নিজেরই বাইশে বিক্রয় করা চাল ত্রিশ টাকায় কিনতে হয়।

দু-চার মাসের মধ্যে সেইসব মহাজনেরা তাদের সংগৃহীত চাল, ডাল ইত্যাদি গুদামজাত করে সেইসব দ্রব্যের বাজার-সংকট ঘটাতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যে সেই চালের দাম বত্রিশ থেকে বিয়াল্লিশ ছাপিয়ে যায়। এমন সময়ে সেই পূর্বের চাষি পুনরায় তার দোকানে এল—

‘বাপু চাউল কি দরছে?’

‘এহন তো বিয়াল্লিশ করকে দেসিরে ফলনাদা, দো’দিন পর তাও পারিম না, দোকান ঘর বেবাক ঢং ঢং, চাউলের সাপ্লাই নাই। বস্তা চারেকছে, ওতেই যতদূর যাই!’

আরও কয়েক দিন পর খেলতে খেলতে সেই বাইশের চাল বাহান্নকে পার করিয়ে ফেলে।

শোনা যাচ্ছে এখন নাকি নতুন আইন হচ্ছে, যে যত মজুত রাখতে পারে। সীমার কোন বাধা নেই। আমার শঙ্কা যদি দশ শতাংশও সঠিক হয় তাহলে কী হতে পারে, একটু অনুমান করি—

সরকারি নতুন আইন অনুযায়ী যত খুশি খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখতে পারেন। এই হুজুগে স্থানীয় মহাজনেরা অধিক লাভের আশায়, তথা একচেটিয়াভাবে এলাকার সমস্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে বাজার থেকে ওইসব খাদ্যদ্রব্যের প্রথমে চরমসংকট ঘটাবে এবং সুযোগ বুঝে সেইসব দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া দর করে অল্পঅল্প পরিমাণে ছাড়তে শুরু করবে। এমন ঘটনা যে নতুন করে ঘটবে তা নয়, যা প্রতি বছরই ঘটে থাকে। তবে তখন আইন ছিল। যত বড়ই মহাজন হন না কেন, নিদিষ্ট পরিমাণের অধিক খাদ্যদ্রব্য মজুত করা আইনত অপরাধ ছিল, সে ভয়ে কেউ-ই সেই সীমা লঙ্ঘন করত না। তাই তাদের স্বকল্পিতভাবে সৃষ্টিয় সংকট খুব তাড়াতাড়ি আয়ত্তের মধ্যে চলে আসত। কিন্তু এখন আর তা হবে না। তাদের মর্জিমত সংকট তৈরি হবে এবং তাদের মর্জিমত সংকটের অবসান ঘটবে। তারা ইচ্ছা মতো মূল্য ধার্য করবে, আর আপনাকে, আমাকে তাদের ধার্য করা মূল্য দিয়েই ক্রয় করতে হবে। দশটাকার দ্রব্য যদি একশত টাকা চেয়ে বসে, তাহলে তাই দিতে হবে। ওর গুদাম ভর্তি রেশন থাকলেও কিছু করার থাকবে না। 

অপরদিকে যে কৃষক প্রথম বছর বাইশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় করে গিয়েছিল, সে যখন পুনরায় পরের বছর চাল বিক্রয় করতে আসবে, তখন ওই মহাজন প্রথম বছরে নির্দিষ্টসীমার অতিরিক্ত চাল কেনার কারণে কিছুটা হলেও পরের বছর গুদামে অবশিষ্ট রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে! অন্যদিকে পরের মৌসম আবার চলে এসেছে, তখন সে তার গুদামে পড়েথাকা অবশিষ্টটুকু দেখিয়ে চাষিকে বলবে—

‘দেখ ভায়া, গেল বরীষের চাউলই এহনো সেল দিবা পারনি, নয়া করে কেংকারা কিনিম ক? লাখ লাখ টাকার মাল পচে যাসে, এদিগে হামার মাথাও বিগড়ে যাসে! ব্যবোসা না করলেও নয়। তোর লগে দীর্ঘদিনের খায়-খাতির, নাও করবা পারোসি না, দিয়ে যা, যা হয় দেখান যাবি।’

মহাজনের কথাশুনে সেই কৃষক হতভম্ভ হয়ে তারদিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তবুও সে হৃদমাঝারে একমুঠো বল সঞ্চয় করে চালের দরটা শুনবেই!

‘দেখ বাবু দরের কথা কী আর কউরে, যা চোদ্দ করে দিম। তার উপর পারিম না, মাফ করিস।’

এক বছরের মধ্যে বাইশের চাল চৌদ্দ টাকায় নেমে আসল। এরপর স্থানীয় মহাজনেরা সেইসব কৃষকদেরকে নিয়ে আর কোন কোন ধরনের খেলা খেলবেন তা কল্পনার বাইরে।

সরকারি মান্ডি:

এ বছর প্রকৃতির সহায়, বন্যার টান থেকে ধরে রেখে, খরার হাত থেকে রক্ষা করে, পচাড়ির মুখে আগুন লাগিয়ে পঞ্চাশ শতক জমিতে আট কুইন্টাল পঞ্চাশ কেজি ধান তুলেছি। এতে দুই মাগ ভাতারের বছর অনায়াসে কেটে যাবে। তবে সমস্যা পিছন ছাড়তে চায় না, সে ধান আবাদ করে দেনাও তো করেছি অনেক, তাদের শোধ দিতে হবে, আবার নতুন করে ফসলও বুনতে হবে, অযথা পর্তি ফেলে রেখে লাভ কী? এত কিছু সাত-পাঁচ ভেবে দেখি, সে সমস্যা সমাধান করতে অর্ধেকর বেশি ধান বিক্রয় করা ছাড়া উপায় নেই। খালেদ মিঞার কাছে খবর নিয়ে জানতে পারলাম, সরকার মান্ডিতে তেরশো পঞ্চাশ টাকা (১৩৫০/-) প্রতি কুইন্টাল দরে ধান কিনছে, আর মহাজনরা হাজার-বারোশোর উপর নিচ্ছে না। সে হিসেবে তো চার কুইন্টাল ধান বিক্রয় দিতেই হবে।

পরদিন ত্রিশ টাকা প্রতি কুইন্টাল দর হিসেবে এক ভডভডি ভ্যান ঠিক করলাম। তাতে চার কুইন্টাল ধান বোঝাই করে আমাদের মোহনপুর সরকারি মান্ডিতে পৌঁছালাম। গিয়ে দেখি মান্ডির দরজায় তালা ঝুলছে, কেউ এসে খবর দিয়ে গেল— 

‘আপনি জানেন না করোনা কাল, লকডাউন।’

‘হাই বাপ, এ কী খবর!’ 

কোন উপায় না পেয়ে গাড়ির ড্রাইভার ভাইকে বললাম, ‘কী ভাই, কী করান যায়?’

সে একটু মাথা চুলকিয়ে উত্তর দিল—

‘সোহনপুর মান্ডি খোলা থাকবার পারে!’

‘চল, তাহলে গাড়ি স্টাট করেক।’

‘ভাড়া কিন্তু ডবল নিম দাদা।’

‘আচ্ছা চলেক দেওয়ান যাবি।’

হ্যাঁ, সোহনপুর মান্ডি খোলাই রয়েছে। যথারীতি গাড়ি নিয়ে ভিতর ঢুকে পড়লাম। মান্ডির কাউন্টার গিয়ে আধিকারিককে গিয়ে বললাম, স্যার চার কুইন্টাল।

‘কি? গম, ভুট্টা, না পাট?’

‘স্যার, শুকনা খন খনে ধান।’ 

‘ও ধান এনেছেন; ধানের গো-ডাউন তো ভর্তি, থোয়ার জায়গা নায়। মাল সাপ্লাই হোক, তারপর কেনা হবে। আচ্ছা থামুন আমি একটু রোহনপুর মান্ডিতে ফোন করে দেখি, ওরা নিচ্ছে নাকি।’

আধিকারির কথা শুনে রোহনপুর মান্ডিতে রওনা দিলাম। তার আগে গাড়ির ভাড়াও কাটাকাটি হয়ে গেল, প্রতি কুইন্টালে আরও সে কুড়ি টাকা বেশি ভাড়া ধরবে।

সকাল থেকে এই মান্ডি ওই মান্ডি ঘুরতে ঘুরতে বেলা প্রায় দ্বিপ্রহর পেরিয়ে যাচ্ছে; খিদের জ্বালাও আর সইছে না, পকেটও ফাঁকা। ত্রিশ টাকা নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম। দশ টাকার বিড়ি আর একটা একটাকার মেচ-এ এগারো টাকা ইতি মধ্যে খরচ হয়ে গেছে; অবশেষ এই উনিশ টাকায় কিছু হবে না! একটু সংকোচে ড্রাইভার ভাইকে বললাম— 

‘হারে বাপু খিদা পাইসেরে, তোর লগে টাকাছে?’   

‘হবেক শোউ খানেক’

‘চল একটু ভাত খ্যায়া লই।’

ভাত, ডাল, একটা সবজি আর দেশি মুরগীর কষা। ভাত ডাল তো ঠান্ডায় কাঠ, মুরগীর মাংস এতই শক্ত যে দেওয়ালে পা লাগিয়ে টেনে ইঁচড়ে খাওয়া হল।  

প্রায় আড়াই-তিন দন্ড সময় অতিক্রম করে রোহনপুর মান্ডিতে পৌঁছালাম। আধিকারি গদিতে বসে, ‘স্যার চাইর কুইন্টাল ধান সোহনপুরথে পাঠাইনসে।’

‘ও আচ্ছা, তবে আপনাকে দেরি করতে হবে।’ কথাটা শুনে শান্তির স্বস্তি ছাড়লাম বটে, যাক বাবা একটু দেরি হলেও মন্দ কী, শেষ উদ্ধার তো হওয়ান গেল। ‘স্যার কত দেরি লাগব?’

‘সে তো দাদা বলতে পারব না, আমাদের বস্তা শেষ হয়ে গেছে, বস্তা আসুক তারপর পাল্টি করে নেওয়া হবে। আমাদের লোক গেছে বাজারে একটু বসুন।’

দশ মিনিট… কুড়ি মিনিট… ত্রিশ মিনিট পর খবর আসল, ‘বস্তা পাওয়া যায়নি, কাল আসবেন।’

‘উফ্‌ ভগবান, আজ কার যে মুখ দেখে বের হয়েছিলাম! শেঠ-এর লগে দু’দশ টাকা কম হলেও এত হইরানি হবা হলেক না হয়, কী নাই ভুল করনু! চল ভায়া গাড়ি ঘোরাক, যা হয় তা হয়, রামেশ্বর শেঠের গদিতেই চ। মাঙনা হলেও দিয়ে দিম! আর এই সরকারি মান্ডিত কোন দিন আসুম না।’ আমার কথা শুনে ড্রাইভার মাথা নিচু করে নিল। অর্থাৎ তার ভাড়ার সমস্যা। অবশেষে তাকে আশ্বাস দিলাম, আস্তে যে ভাড়ার কথা হয়েছিল, এখান থেকে ফিরে যেতে আরও তত দিয়ে দিব।

 

রোহন পুর মান্ডি থেকে ফিরে আস্তে আস্তে ড্রাইভার ভাই কিছু রহস্যের কথা ফাঁস করল, যা আমার ইতিমধ্যে জানা ছিল না— 

“জানেন বড় ভায়া, এরা হক করেই হামার মত চাষার মাল কিনবেক নাই। নানান কথ্যা সাত সতেরোর ঝাল বুঝায়েন ফেরত দেওয়ন দিবি। আর তু যহন হইরান হুয়ি মহাজনরের গোড়ত জলের দামে মালটা দিয়েন যাবি তহন, এরাই ওই মহাজনরের গোড়ত ফোন দিবি, ‘কী ভায়া ওই মালাটা দিয়ে গেল?’ তহন মহাজনে কবে— ‘হ ভায়া দিয়েন গেসে হাজার টাকার দরে।’ এই হাজার টাকার মাল এগারোশো টাকায় লিয়ে যাবি, আর সরকারের খাতায় সাড়ে তেরোশো টাকা লেখে দেখাইন দিবি— কৃষকের থে এই দরে ধান কেনা হুলি। তোর কাছথে যদি পরকা ভুলেও কিনে তো টাকা আর সাথ সাথ দিবিক নাই, কবে তোর খাতায় দিয়ে দিয়েন হুবি; সে টাকা কহন দিবেক তার ঠিক ঠিকানা নাই। হারা মনে করসে তোরঠে খাই খাতির আসে তাই তু সরকারি মান্ডিত ধান নিয়ে যাসু। সে তনকেই মুই আর কিছু কউ নি।”

ড্রাইভারের অভিজ্ঞাতা… আমার অভিজ্ঞাতা আদানপ্রদান করতে করতে দিনের পড়ন্ত বেলায় রামেশ্বর শেঠের গদিতে এসে পৌঁছালাম। ‘কাকা চাইর কুইন্টাল শুকান খনখনা ধান আনসি ঠিকঠাক দর লাগা।’ 

রামেশ্বর কাকা তার সিং-এর ন্যায় গোঁফে তাও দিতে দিতে বলবেন— 

‘কী আর কহিম রে ভায়া, দর খুব বেজার! গেলবার কার ধানই মোর ঘরত পচসে, উচিত দর পাসি না রে, যে সেল দিম! কী করে নয়া করে কিনুম ক? বুকে বল পাসি না! যাক সে সব কথা, মুর লগে আইসু যহন তো এই কাকারে তোক ফেরত দেহন নাই। যা হয় দেহন যাবি। তবেরে বাপু গেল বার কার দর এবার দেবান পারুম নাই।’

‘কাকা তুই দর কহেক যা হয় দিয়ে জাম, ওত মুই সাইত-পাঁচ ভাবনার লোক নহেই। যার ঘরেরে ফুটা ছাওয়ন, সেই করে বারিষের আহন। তারেই কই কৃষক। হামিও পাক্কা কৃষক আসি, বারিষেরে ডরাই না।’

‘দেখ ভায়া তোরঠে দর কাটাকাটি করুম না, এক দর হাজার টাকা। মনকে লাগলে দে না হলে যা।’

দিনের শেষে নগদ চার কুইন্টালের চার হাজার টাকা পেয়ে সারা দিনের হয়রানি ক্ষণিকের জন্য নিবারণ হয়ে গেল। এর মধ্যে গাড়ি ভাড়া গেল ৩০x২+২০x২x৪=৬৪০+১০০ (খাবার) টাকা। হিসেব করেছিলাম গাড়ি ভাড়া বাদ দিয়ে ৫২৮০ টাকা পাব, পেলাম ৩২৬০ টাকা! ২০২০ টাকাই নাই, তার জন্য আরও দুই কুইন্টাল ধান আগামীকালই আনতে হবে। অবশেষ থাকবে আড়ায়! ঠেলে ঠুলে মাগ-ভাতারের মাস তিনেক যাব। তার পর হা… হুতাশ।

বেসরকারি মান্ডি:

এখানে সাধারণ কৃষককে ভোগের পশুর ন্যায় প্রথমে পূজা ও তারপর বলি করা হয়। নিরীহ কৃষক বুঝতেই পারে না, তাকে এত পূজা করা হচ্ছে কেন। যখন একলা বসে হিসেব করতে বসে; কত দিলাম, আর কত পেলাম তখন, বুঝতে পারে এরা আমার গলা কেটে নিয়েছে। আর এই গলা কাটা কৃষক এক সময় প্রাণও বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। 

পূজার মণ্ডপের ন্যায় চাকচিক্যভাবে চারদিকে সাজানো, মান্ডিতে ঢোকার সাড়ে ছত্রিশ হাত দূরেই মান্ডির কোন এক কর্মচারী আপনার পা জড়িয়ে ধরবে, দাদা, কাকা, চাচা, জেঠে থেকে বাবাও বলতে দ্বিধা বোধ করবে না, তবুও যেন আপনি মান্ডির ওর আড়হৎ মালটা দেন। যদি মাছের মান্ডিতে যান তো মাছের ডেক আপনার কাঁধ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের কাঁধে নিয়ে নেবে, তারপর আপনি বাবুর মত তার পিছন পিছন যান, বাজার দেখুন আর যদি আপনার মাছ ডাক হয়, তো বাবুর মত নগদ টাকা গুনে নিয়ে চলে যান। এর মাঝে যা ঘটবে তা কল্পনার বাইরে।

সে দিন আমি বাড়ি থেকে ওজন করে দশ কেজি রুই-মীর্গা মাছ বেসরকারি মান্ডিতে নিয়ে আসলাম। হুম্‌, পূর্বের ন্যায় সেইরকম আদর সম্মান। আট-দশ জন এসে আমার মাছের ডেক নিয়ে টানাটানি করতে শুরু করল। এদের মধ্যে এক পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম সে সরকারবাবুর লোক। তাকে দেখে একটু হেসে বললাম সরকার আড়ত। সরকার বাবুর নাম শোনা মাত্র বাকিরা ডেক ছেড়ে দিল। সরকারবাবুর কর্মচারীটি মাছের ডেকটি নিয়ে মান্ডির ভেতর ঢুকে পড়ল, আমি তার পেছন পেছন গিয়ে দেখি ছ’জনের পরেই আমার। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ডেকের পালা এল। সেই ডেক থেকে দুটো মাছ নিয়ে গেল ঝাড়ুদার, আর দুটো তুলে নিল আড়তদার। এরপর মাছ দুই দাগে ওজন হল। প্রথম দাগে পাঁচ কজি, দ্বিতীয় দাগে সাড়েচার কেজি। 

শুরু হল ডাকের পালা— ‘এই তাজা তাজা রুই-মৃগারে, এই তাজা তাজা, দাম বলও এই নড়া চড়া, রুই-মৃগারে দাম বলও।’ আড়তিয়া ডাক শুনে দু-চার জন মাছুয়া (যে মাছের ব্যবসা করে) এসে নেড়েচেড়ে দাম ধরল পঞ্চাশ। 

আড়তিয়া।।  এই পঞ্চাশ পঞ্চাশ… পঞ্চাশ… পঞ্চাশ পঞ্চাশ পঞ্চাশ…

দ্বিতীয় মাছুয়া।। ষাট।  

আড়তিয়া।। এই ষাট… ষাট, ষাট ষাট… ষাট…

তৃতীয় মাছুয়া।। সৌত্তর… সৌত্তর সৌত্তর… সৌত্তর…

আশি, নব্বই, শোউ ডাক দু’জন ব্যতীত বাকিরা কেটে পড়ল। কারণ তাদের অনুমানের বাইরের দরে তার মাছ কিনবে না। বাকি দুইজন থেকে গেলে তারা আরও একটু দেখতে চায়।

আড়তিয়া।। এক শো… এক শো… এক শো…

প্রথম মাছুয়া।। এক শো পাঁচ।

আড়তিয়া।। এক শো পাঁচ… এক শো পাঁচ…পাঁচ পাঁচ…এক শো পাঁচ…

দ্বিতীয় মাছুয়া।। দশ।

আড়তিয়া।। এক শো দশ… দশ… দশ… আর কেউ? এক শো দশ… আর কেউ নাই একশো দশ।

একশো দশ শেষ ডাক উঠল। আড়তিয়া হাক দিয়ে ক্যাসিয়ারকে জানিয়ে দিল— ‘ফলনার পোনা মাছ, প্রথম কাটা, দর একশো, নিল বিষ্ণু মাহাত।’

এখানে এই নিয়ম, যে ডাক ওঠে আসলে সেটা বিক্রয় মুল্যের ডাক। ক্রয় মূল্য, এই বিক্রয় মূল্য থেকেই নির্ধারিত হয়। যেমন— একশো টাকার নীচে যদি ডাক ওঠে তবে সেই ডাকের দাম থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে ঠিক করা হয় ক্রয় মুল্য। আবার একশো টাকার উপরে পাঁচশো টাকার নীচে যদি ডাক ওঠে তবে সেই ডাকের দাম থেকে দশ টাকা কমিয়ে ক্রয়মূল্য ঠিক করা হয়। আমার যে মাছটির একশো দশ টাকা ডাক উঠল, মাছুয়ারা সেই দরে মাছটি বিক্রয় করতে পারবেন, এর বেশি দরে বিক্রয় করা যদিও অপরাধ তবে তার কোন আইন নেই। আর আমি পাব একশো টাকা প্রতি কেজি দরে।

এখন হিসেব ও লেনদেনের পালা। মাছগুলো দুই কাটায় ভাগ করা হয়েছিল, পাঁচ কেজি ও সাড়েচার কেজি, মোট সাড়েনয় কেজি। নিয়ম অনুসারে প্রতি কেজিতে ১০০ গ্রাম করে ‘ধলটা’ বাদ দিয়ে মাছের ওজন দাঁড়াল সাড়ে আট কেজি, যার দাম আটশত পঞ্চাশ টাকা (৮৫০/-)। আড়ত খরচা এখানে একটু বেশিই কেটে নেওয়া হয় প্রায় আট শতাংশ (৮%), সেই অনুযায়ী আটশত পঞ্চাশ-এর আট শতাংশ হয় বাহাত্তর (৭২/-) টাকা, তার সঙ্গে আরও আট টাকা যোগ করা হল, খাজনা, ওজন সাফাই ও ইত্যাদির জন্যে। সর্বশেষ খরচ বাদ দেওয়ার পর আমি মোট টাকা পেলাম— সাত শত সত্তর (৭৭০/-) টাকা মাত্র।

 

আমি বাড়ি থেকে ওজন করে দশ কেজি মাছ এনেছিলাম, যা বিক্রয় হল ১১০ টাকা প্রতি কেজি দরে। আর আমি পেলাম মাত্র ৭৭ টাকা প্রতি কেজি দরে! মাঝখানের ৩৩ টাকা নাই। চোখের সামনে থেকে ঝিলমিল করে বাষ্পের ন্যায় হারিয়ে গেল। সবই আমার চোখের সামনে ঘটে গেল, যার বিরোধ করার কোন জায়গাই পেলাম না! সবই নিয়মের মধ্যে। এক হাত থেকে অন্য হাতে যেতেই ৩৩ টাকা নাই, দ্বিতীয় হাত থেকে তৃতীয় হাতে যেতে না জানি আরও কত যাবে, এবং সবশেষে সেই মাছ সাধারণের হাতে কী দামে পৌঁছাবে?

এই কটি মাছ উৎপাদন করেতে, আমি সারা বছর খেটেছি আপ্রাণ, মূলধনও লেগেছে বেশ। মাছের ধানি/পোনা, সারা বছর মাছের খাবার— খোল, ভুষি, সি পি ও ইত্যাদি। শুদ্ধ, পরিষ্কার জল রাখতে দিয়েছি চুন ও পটাশ। অসুখের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লেগেছে ঔষধ অগাধ। দিনরাত বসে হাঁকিয়েছি বক, শামুক ও রাতচোরাকে। বন্যায় গিয়েছে কিছু ভেসে, রুখেছি এই শেষ! এই সূত্রে একটি ছোট্ট হিসেবে করে দেখা যাক—

একজন সাধারণ মাছ চাষির দৈনিক আয় প্রতি কেজিতে ০.২১ পয়সা মাত্র। যার পিছনে রয়েছে মূলধন ও শারীরিক মজুরি। আবার যে বছর বন্যায় ভেসে যায়, সে বছর সাধারণ মূল্য তো উঠে আসেই না, উপরন্তু ৩০ পয়সার অধিক প্রতি কেজিতে ক্ষতি হয়ে যায়। 

অন্যদিকে একজন আড়তিয়ার বসে থেকে, কোনরূপ মূলধন ছাড়াই প্রতি কেজিতে বার্ষিক আয় ৪৭০০ টাকা, এবং ব্যবসায়ীর বার্ষিক আয় প্রতি কেজিতে ৭৩০০ টাকা (মূলধন ছাড়ে)। এখানে কোনোরকম বান-বন্যা বা ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কোন খুচরো মাছ ব্যবসায়ী তার মাছ বিক্রয় করার সময় যদি বলেন, ‘দাদা কেনা দামের থেয়ে দু’টাকা মাত্র লাভ রেখেছি।’ তাহলেও সে কৃষকের পাওয়া দামের থেকে ২২ টাকা বেশি লাভে রেখেছে (ডাকে দশ টাকা+ধলাটা ১০০গ্রাম=দশ টাকা+দুই টাকা লাভ)। আর যদি বলে ‘দাদা কেনে দামে দিচ্ছি!’ তবু সে কুড়ি টাকা লাভ রেখেছে। এ তো হল এক হাত থেকে দ্বিতীয় হাতের দ্বারাই আপনার কাছে পৌঁছানোর দর! এখান থেকে যদি তৃতীয়… চতুর্থ হয়, তাহলে তার দর কোথায় পৌঁছাবে তার কোন ঠিক হিসেব নেই।

এহনে কিছু সভ্য জ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে; এতই যখন লস বা ক্ষতি, এতই যখন মরণ খাটুনী তো এরা আবাদ করে কেন। পৃথিবীতে আর কোনই কাজ নেই? তাদের জন্য একটাই উত্তর, এরা স্বনির্ভর। কারোর ধার ধারে না, নিজের রাজ্যে নিজেই রাজা ও উজির বা নিজেই ফকির। বিশ্বজুড়ে যদি খাদ্যের হাহাকার পড়ে যায়, তবু এদের ভাণ্ডার ভরপুর। কারণ এরাই ঈশ্বর। কোটি কোটি প্রাণীর ক্ষুধার নিবারণ।

অনেকে মনে মনে হাসছেন আর ভাবছেন ইনি সত্যই পাগলের রাজা। এরাই যদি সব হয় তো এদের চাওয়ার বা পাওয়ার কী আছে?

হ্যাঁ, সত্যই এদের চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই নেই! কিন্তু এদেরকে পদতলে চেপে রাখা কিংবা এদেরকে নিয়ে ছিনিমিনি করে খেলার অধিকার কারোরই নেই। মানব সভ্যতার শুরু থেকে কিছু সভ্য লোক, কিছু শাসিত ব্যক্তি; এদেরকে নিয়ে রাজনীতি করে, এদের কে নিয়ে কানামাছি খেলে, এদের কে চিরদিনই অসভ্যের বস্তিতে ফেলে রেখেছে! এদের প্রতি ছলে-বলে-কৌশলে শোষণ-শাসনের অশেষ প্রয়াস আজীবন অব্যাহত। 

সবকিছুরই একটা সহ্যের সীমা আছে। শ্রীকৃষ্ণ কৌরবদের অনেক, অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন! ব্যক্তিগতভাবে কর্ণকেও। কিন্তু কৌরবদের অনাচার ব্যবহার যখন বিন্দু মাত্র ক্ষীণ হল না তখন শ্রীকৃষ্ণের মহাভারতের প্রয়োজন হল। ভোলামন, ভোলা মহেশ্বরও একদিন তাঁর নিজের সন্তানের মাথা কাটতে বাধ্য হতে হয়েছিলেন এই সহ্যের সীমা উল্লঙ্ঘনের কারণে। আমি মন থেকে তা কখনই চাইব না যে, এই আনাচার ব্যবহার এতটাই অসহ্য না হয়ে উঠুক যেন, পুনরায় শিবের ন্যায় এই কৃষক তার সন্তানের মাথা কাটতে বাধ্য হয়।     

জয় জওয়ান জয় কিষাণ:

‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’; লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর এই উক্তিটি শুনে মনে ভরে যায়, বুকের কলিজা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এক প্রকার বীরত্ব বীরত্ব ভাব উদ্‌ভাসিত হয়। কিন্তু বাস্তবে কার কতটা জয়? এক ঝলক দেখ লই।

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং সুরক্ষা যা সর্বশ্রেণির, সর্বজাতির, সর্বদেশের একমাত্র কাম্য এবং একমাত্র লক্ষ্য। যার ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী যার উপর নির্ভর তারা এই জওয়ান ও কিষাণ। অর্থাৎ দেশের সৈনিক এবং সাধারণ কৃষক। সুরক্ষার নজরে সৈনিকদের ভূমিকা অশেষ, এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন দেশহিতৈষী সরকারের কাছে! কোন এক মহান ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদেরকে নিয়ে, যে স্বপ্ন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরিত! যাদের জয়গাথা গেয়েছিলেন জীবনের শেষ নিশ্বাস অবধি! সেই মানুষটির স্বপ্ন পূরণে সরকার কী ভুমিকা পালন করছে, সে বিষয়ে কিছু কথা বলে যেতে চাই!

‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’— এ দুয়ের মধ্যে জয় প্রকৃত পক্ষে কারোরও সর্বপরি নয়! দেশসেবা হেতু হাজারও প্রাণ ধুলোয় মিশে যায়, যার হিসেব কেউ-ই রাখে না। যার যায় একমাত্র তার পরিবার পরিজন ছাড়া কেউ-ই বুঝতে পারে না। যেদিন বার্ষিক শহীদের হার শূন্য হবে সেদিন ধরে নেওয়া হবে জয়ের শিকড়ে আমরা। তবে একথাও অস্বীকার করা যায় না, যদি একজন সৈনিকের প্রাণ যায়, তবে সে রাষ্ট্রীয় সম্মান পায়, তার পরিবারের পাশে সরকার এসে দাঁড়ায়। অন্যদিকে একজন কৃষকের যখন অকালেই প্রাণ যায়, তখন চিৎকার করে গ্রাম পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের কাছে জানাতে হয়, যদি কপালগুণে দু’চারশো টাকা ঘাট খরচের জন্য বেরিয়ে যায়! তারপর সম্পর্ক শেষ। সেই কৃষকের পরিবারের কী হল? তার বউ-বাচ্চার কী হল? কোথায় গেল? তার খবর কেউ রাখে না। তবু গর্বের সঙ্গে বলি— ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’!

আমদের দেশের একজন জওয়ানের গড় মাসিক আয় প্রায় ষাট হাজার টাকা (৬০,০০০/-) যা সরকারদ্বারা নির্ধারিত। মূলধনের প্রশ্নই উঠে না। অন্যদিকে একজন কিষাণের মাসিক গড় আয় আনুমানিক ছয় হাজার চার শত টাকা (৬,৪০০/-) অ-নির্ধারিত। আর এই ছয় হাজার চার শত টাকা আয় করতে প্রায় এগারো হাজার ছয় শত ষাট টাকা (১১,৬৬০/-) মূলধন ব্যয় করতে হয়। আর বুকভরা গর্বের সঙ্গে বলি— ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’!

একজন জওয়ান চাকরি শেষে পায় এক মুঠো টাকা, কিংবা আজীবন মোটা অংকের ভাতা। আর একজন কিষাণ যখন অবসরপ্রাপ্ত হয় তখন সে কী পায় জানেন? মৃত্যু! আর যদি বেঁচে যায় তখন বার্ধক্য ভাতা হিসেবে যে টাকা পায়, সে টাকায় হাঁটু ব্যথা কোমরে ব্যথার মালিশ তেলের দামও জোটাতে পরে না! তবে ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ উচ্চারণে বুকের পাটাও প্রস্তুত হয় বেশ! এহেন আমার প্রিয় জ্ঞানী-গুণী পাঠাকবর্গ অবশ্যই একথা বিচার করে বুঝে নিয়েছেন, আসলে ‘জয়’-টা কার! আবার অনেকের মনে প্রশ্নও জাগতে পারে, দেশের সৈনিকেরা দেশের সুরক্ষার খাতিরে নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিতে পিছপা হয় না। তাদের জন্য উক্ত পাওনা আবশ্যিক। সে বিষয়ে কোন প্রশ্নও নেই। প্রশ্নটা এইখানে, যেখানে কিষাণের জয়ের কথা বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে এবং কৃষকদেরকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। আজ কৃষক যদি ফসল না ফলাত, তো না থাকত দেশ, না থাকত দেশের ইত্যাদি। পেটে অন্ন ছাড়া কোন মহান কাজ সাধিত হয় না। কিন্তু আজ এই অন্নদাতার অচিরে হাজার হাজার প্রাণ বিসর্জিত হয়ে যাচ্ছে, যার কোন হিসেব নেই, যার কোন মীমাংসা নেই! একজন কৃষক জমি চাষ করছে এমন সময়ে হঠাৎ করে মাথার উপর বজ্রাঘাত ঘটল, অবশেষে মৃত্যু… দেশের সেবা করতে করতে এখানেও কিন্তু একজন শহীদ হলেন; এই শহীদের হিসেব রাখে কয়জন? এই শহীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় কয়জন? হাজার প্রাণের বির্সজনের পর কোন একজনের কথা যদি সরকারের কানে পৌঁছায় তো উনি একটাই কথা উচ্চারণ করেন— ‘আমি দুঃখিত।’ তারপর সব হিসেব সব লেনদেন শেষ।

লাঞ্ছিত, পীড়িত ও সুব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর হজার হজার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র সরকারের কারণে। শুধু মাত্র ২০১৯ সালেই প্রায় দশ হাজার (১০,০০০) ভারতীয় কৃষক আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রতি দিনে সাতাশ (২৭) জনেরও অধিক। কেউ হাত উঁচু করে বলতে পারেন এইসব মৃত কৃষকদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে তাদের আত্মহত্যার কারণ সবাই জানেন—

(এক) ঋণ, (দুই) ফসল নষ্ট অথবা (তিন) ফসলের উচিত মূল্য না পাওয়ার কারণে। 

তবে উনি বুক ফুলিয়ে উচ্চারণও করেন— ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ।’ 

যা পায় তা চায় না, যা চায় তা পায় না:

একজন প্রকৃত কৃষক আসলে কী চায়? বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নের উত্তর জানা অত্যন্ত আবশ্যক। অনেকের মনে আবার এ প্রশ্নও জাগতেও পারে, দেশের সরকার সাধারণ কৃষকের জন্য এত নিত্যনতুন প্রকল্প আনছে, কোটি কোটি টাকার বিল পাস হচ্ছে, সব যাচ্ছে কোথায়? কৃষিজমির খাজনাও মকুব করেও কি তাদের আয় দ্বিগুণ হচ্ছে না?

প্রথম বক্তব্য খাজনা মাফ-এর সাধ্য দিয়ে শুরু করা যাক। একজন প্রকৃত কৃষক কখনই মন থেকে চায় না তার জমির খাজনা মকুব করে ভিন্ন পথে তার দ্বিগুণ পরিমাণের টাকা কেটে নিক। আমার অভিজ্ঞতায় এ দৃশ্য স্পষ্ট যে, সরকার যে বছর খাজনা মুকুব করে সেই বছর, DAP, MOP, SSP, N2, 10:10:26, 15:15:20, 20:20:20. প্রভৃতি সারের প্রতি প্যকেটে ৫০টাকা মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়, এবং অন্য দিকে কোম্পানি তার সঙ্গে আরও ৫০টাকা যোগ করে মহাজনের কাছে বিক্রয় করে। সবশেষে মহাজন ও দোকানদার আরও ২৫+২৫ অর্থাৎ ৫০টাকা আরও যুক্ত করে সাধারণ কৃষকের হাতে বিক্রয় করে। এ-ভাবে প্রতি প্যাকেটে একশত পঞ্চাশ টাকা বেশি গুণতে হয়। এক একর (১০০ শতক) ‘নামা’ জমির খাজনা বছরে ১০৮-১২০টাকা। উক্ত জমিতে বছরে কম পক্ষে দশ প্যাকেট সারের প্রয়োজন হয়। যদি প্রতি প্যকেটে ১৫০টাকা বেড়ে যাওয়ার ফলে এই সাধারণ কৃষকদের, সেই বছর থেকে প্রতি একরে এক হজার পাঁচশত টাকার (১৫০০/) লোকসান হতে শুরু হয়। এইভাবে যতবার সরকার কৃষকের জমির খাজনা মকুব করে ততবারই সারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই যুক্তি সংগতভাবে একজন সাধারণ কৃষক কখনই তার জমির খজনা মকুবের পক্ষে নয়, কিন্তু দেশের সরকার নিজের গদির কারণে অযথাই খাজনা মকুব করে রাজনীতি করতে শুরু করে দেয়।

দ্বিতীয়ত সুব্যবস্থা; ফসল বোনা থেকে শুরু করে পরিচর্যা, উৎপাদন এবং উৎপাদিত ফসল ঠিক বাজারদরে বিক্রয়ের মধ্যে যদি সরকার একটা সুষ্ঠ কাঠামো গড়তে পারে, তাহলে এইসব সাধারণ কৃষকের প্রায় নব্বই শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কৃষক তার স্বভূমিতে সারাবছর অপার পরিশ্রম করে, সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝাকে উপেক্ষা করে ফসল ফলাবে, আর সে ফসল দেশ সেবায় নিয়োজিত করে দেবে, এই তার পরম পূজা। সে পূজাই চরম বাধা হয়ে উঠছে সুব্যবস্থার অভাবে! কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের মূল্য কখনই নির্ধারিত করে না। শুধু মাত্র তার কায়িক শ্রমের মূল্য উৎপাদিত ফসলের উপর ন্যস্ত করে। আর সে মূল্যে দেশবাসী থেকে দেশের সর্বোচ্চ সরকার পর্যন্ত দিতে নারাজ! সেই মূল্যকে নিয়ে চলে ছিনিমিনি খেলা, যেখানে কৃষক তার কিছুই পায় না, আর সাধারণ মানুষ জন ক্রয় করতেই পারে না।

আমাদের সাধারণ কৃষকের কারোরই রাজমহল নেই যে, সে সেখানে উৎপাদিত ফসল বছরের পর বছর বজায় রাখতে পারে। তাদের ছোট্ট একটা কুঠিয়া, যেখানে দুই স্বামী স্ত্রী ব্যতীত কোলের সন্তান, হালের বলদ আর দুধের গাইকে বুকে জড়িয়ে রাখা ছাড়া ভিন্ন স্থান অবশেষ নেই। অনেক সময় নিজের পেটের অন্নটুকুও ধরে রাখতে পারে না। যার স্থান হয় কোন কপটিয়া মহাজনের গুদামে। এ-অংশে একজন প্রকৃত কৃষকের কথা আলোচনা করা হচ্ছে, কোন জমিদারের নয়।

সাধারণত কৃষক চাষ আবাদ করে বিভিন্ন মৌসুমের উপর নির্ভর করে। যেমন গ্রীষ্মকালে পাট, বর্ষাকালে ধান, শরৎ-হেমন্তকালে শাকসবজি, শীতকালে রবিশস্য ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সমস্ত ফসল আবাদ করে সে কোনটাই ঘরে বোঝাই করে রাখতে পারে না। সামান্য কিছু অংশ নিজের কাজে লাগিয়ে, দেন-দেনা পরিশোধ দিয়ে আবার তাকে পুনরায় পরের মৌসুমকে ধরতে হয়। এই প্রক্রিয়াই চলতে থাকে বছরের পর বছর। 

এমন সময়ে প্রথম ফসল তুলে তা বিক্রয় করে অতি দ্রুত দ্বিতীয় ফসলের মৌসুম ধরতে হয়। সেই মৌসুম উচিত সময়ে ধরতে না পারলে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নব্বই শতাংশ অতিক্রম করে যায়। একথাও স্পষ্ট যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায় সঠিক মৌসুমে ফসল বোনার অভাবে। চলমান মৌসুম অতিক্রমের ফলে ফসলে রোগ-বিরোগের হারও বেড়ে যায়, পোকার প্রকোপও চার গুণ বেড়ে যায়, এবং সর্বোপরি পুষ্টিকর ফলনের অভাব দেখা যায়। অনেক সময় শুধু গাছই হয়ে ওঠে ফলনের সময় শূন্য। আবার অনেক সময় এও ঘটে যে, গ্রীষ্ম কালের ফসল দেরিতে বোনার কারণে অগ্রিম বর্ষা এসে ধুয়ে মুছে নিয়ে চলে যায়। তাই ঠিক মৌসুমে ফসল বোনা একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।

এখানে দেশের সরকারকে যা সহযোগিতা করার প্রয়োজন তা হল উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেন দশ দুয়ারে ঘুরতে না হয়। যত দ্রুত সম্ভব সে ফসল ক্রয় করে, তার টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে। কৃষক যখনই তার ফসল সরকারি মান্ডিতে নিয়ে আসুন না কেন, তখনই যেন তার ফসল ক্রয় করা হয়। সে রাত দশটা হোক বা বারোটাই হোক। 

সাধারণত একজন কৃষকের ক্ষেত্রে যা ঘটে থাকে তা হল, সে তার ফসল কাঁধে করে এই মান্ডি ওই মান্ডি, এ বাজার ও বাজার ঘুরতে ঘুরতে এক সময় বিরক্ত হয়ে পড়ে এবং অবশেষে অতি সস্তাদরে কোন মহাজনের গুদামে ফেলে দিয়ে আসে কিংবা কোন রাস্তার মোড়ে ফেলে দিয়ে আসে, অথবা আগুন জ্বালিয়ে দেয়, এবং বাড়িতে এসে না খেতে পেয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়। আমি নিজেই কতবার যে আমার ফসল রাস্তার মোড়ে ফেলে দিয়ে এসেছি তার হিসেব নেই। কিছুদিন পূর্বে করোনা ভাইরাস এর কারণে ভারতব্যাপী তালা-বন্ধকালে আমাদের কিছু কাঁচা সবজি বিক্রয় করার অভাবে পচে নষ্ট হয়ে হতে শুরু করে। কোন উপায় না পেয়ে আমি কৃষিদপ্তরে ফোন করে সমস্ত সমস্যার কথা বললাম, উনিও আমার কথা শুনলেন ঠিকই, কিন্তু কোনরকম সমস্যার সমাধান বের না করেই আমাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে ৩০-৪০ কেজির মত ভালো ভালো সবজি তুলে সাইকেলে বোঝাই করে বাজারে গেলাম। বাজারে প্রবেশ করতেই কয়েকজন পুলিশ এসে কৃষকদের মারতে শুরু করল। তাদের মধ্যে থেকে একজন পুলিশ এসে আমার পিঠের উপর সজোরে একটা লাঠির আঘাত করল! সে আঘাত এতই ভয়াবহ ও তীব্র যা বলে বোঝানো যাবে না। হয়তো পশুকেও এমন করে কেউ মারে না। মুহূর্তের মধ্যে বাজার অস্থির হয়ে পড়ল, আমার সেই কাঁচা সবজির দর করার লোক একটিও আর পেলাম না, অবশেষে রাস্তার এক কোণে ঢেলে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফেরার পথে এক মনোরম দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলাম! রাস্তার পাশেই এক দেশী মদের ভাটি বা দোকান; সেখানে মদ ক্রয় করার জন্য কয়েকশো লোক লম্বা লাইন দিয়েছে। সেই লাইনকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করছে সেইসব পুলিশেরা। 

আবারও সেইকথা পুনরাবৃত্তি করে বলি, কৃষককে যেন তার ফসল বিক্রয় করতে অবসন্নতায় ভুগতে না হয়। আমরা শুধু সারকারকেই চিনি বা জানি। সরকার ব্যতীত অন্য কোথাও আমাদের ফসল আমরা বিক্রয় করতে আগ্রহী নই। আমরা কোন কোম্পানিকে চিনি না, কোন বেসরকারি মান্ডিতে যেতে ইচ্ছুক নই, কোন মহাজনের ফাঁদে পড়তে চাই না। আমরা বিনা বাধায় সরাসরি সরকারি মান্ডিতে ফসল দিতে চাই; তারপর আপনি কোম্পানিকে দেখুন, কোম্পানি ও কৃষকের মধ্যে আপনি মধ্যস্থতাকারী হন। দেশ বিদেশে আপনি ব্যবসা করুন; কোন কোম্পানি বা মহাজনের হাতে ছেড়ে দিবেন না। এরা প্রথমে লোভ দেখিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করে; তারপর আস্তে আস্তে গলা কাটতে শুরু করে। একটি ছোট্ট উদাহরণ দিই। জিও টেলিকাম কোম্পানি যখন বাজারে আসে তখন, তারা একটাই কথা প্রচার করতে শুরু করে, ভারতবাসীকে নিজের আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে কথা বলতে টাকা দেবে। কখনই নয়। সে কথায় আপ্লুত হয়ে দেশবাসী তাকে আপন করে নিল, এভাবে কোম্পানি মুহূর্তের মধ্যে ভারতবাসীর মনে জায়গা করে নিল। তারপর আস্তে আস্তে গিরগিটীর ন্যায় রং বদলাতে শুরু করল। এখন আপনি কথা বলুন আর নাই বা বলুন, যদি আপনি ওই কোম্পানির গ্রহক হয়ে থাকেন তো, একটা সময়ের মধ্যে আপনাকে ওই কোম্পানির হাতে টাকা পে করতেই হবে, নইলে আপনার সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ‘প্রথমে মজা তারপর সাজা’। এই হল কোম্পানিদের মূলনীতি। এতে কোন সন্দেহ নেই। একজন সাধারণ কৃষকের ব্যথা মাথায় রেখে, ভূত-ভবিষ্যৎ-এর কথা মন্থন করেই কোনরূপ আইন বা বিল নিয়ে আসা উচিত।

 

তৃতীয়ত) ‘জলসেচ’ ব্যবস্থার উন্নয়ন। কৃষকের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে একটি প্রধান সমস্যা হল জল সেচ ব্যবস্থা। লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি জলের অভাবে আবাদ হওয়া থেকে বঞ্চিত। উর্বর জমি থাকা সত্ত্বেও জলের অভাবে চাষআবাদ করা সম্ভবপর হচ্ছে না! বিশেষ করে জলের অভাবে রবিশস্য বুনতে পারছে না। সেইসব জমির কৃষকেরা অর্ধ বৎসর বর্ষার জলের উপর নির্ভর করে যেটুকু ফসল উৎপাদিত করতে পারছে, তাই চোখের জলে মেনে নিয়ে, বাকি অর্ধবৎসর ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। এরা ভিন রাজ্যে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে বা রাস্তায় রাস্তায় ফেরারি ব্যবসা করে কোনরকমে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখছে। সেইসব শ্রমিক একপক্ষে কৃষক, কৃষিজ জমিও আছে, শুধুমাত্র জলের অভাবে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না।

সরকার যদি নিজেকে কৃষকের বন্ধু বলে পরিচিত করতে চান, তবে এইসব জমিতে যে করেই হোক সেচ জলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কৃষকশ্রমিকেরা যেন সারাবছর নিজের জমিতে ব্যস্ত থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তবেই আপনি কৃষকের হিতকারী বলে পরিচিত হয়ে উঠবেন। 

চতুর্থত) ন্যূনতম সহায়ক মূল্য; অর্থাৎ MSP(Minimum Support Price)। বর্তমান কৃষকের সব থেকে বড় মাথাব্যথা MSP-কে নিয়ে। দেশের সরকার APMC (Agricultural Produce Market Committee)-এর সহযোগিতায় প্রায় ছাব্বিশটি (২৬) ফসলের মূল্য নির্ধারিত করে প্রকাশ করে দেয়। সে ফসলের মূল্য নির্ধারণের কলে সরকার বারবার দাবি করে থাকে যে, উৎপাদিত ফসলের মূল ব্যয়ের সঙ্গে দেড় গুণ যুক্ত করে MSP নির্ধারিত হয়। কিন্তু MSP নির্ধারণের কলে হয়তো বা কোন APMC-এর অধিকারী কোন কৃষকের কাছে গিয়ে সমগ্র উৎপাদন ব্যয় হিসেব করে সে ফসলের মূল্য নির্ধারণ করেছেন! আজকের বাজারে প্রতি কুইন্টাল ধানের MSP মূল্য ১৭২০টাকা। অর্থাৎ তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি কুইন্টালে উৎপাদন ব্যয় ১১৫০টাকা। উক্ত মূল্য APMC কীভাবে নির্ণয় করেছে তা আমার জ্ঞানের বাইরে। প্রবন্ধের শুরুতেই এক কেজি চালের প্রকৃতপক্ষে যে উৎপাদন ব্যয় হয়, সে তথ্য আলোচনায় আমরা যদি জলের মূল্য বাদ দিয়ে শুধু মাত্র ইলেকট্রিক বা তালের খরচ ধরে নিই তাহলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৯.৯২টাকা। সে সূত্র ধরে এক কেজি ধানের উৎপাদনে ব্যয় হয় ২৪.২২টাকা। অর্থাৎ প্রতি কুইন্টাল ২৪২২টাকা। যার MSP নির্ধারিত হবে ২৪২২x১.৫০=৩৬৩৪টাকা। সেখানে দেওয়া হচ্ছে ১৭২০টাকা। সেই মূল্যতেই যে কৃষক তার ধান বিক্রয় করতে পারবে তার কোন ভরসা নেই। কারণ MSP-কে রক্ষা করার কোন আইন ব্যবস্থা নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্য থাকা সত্ত্বেও বা জানা সত্ত্বেও কিছু সুবিধাভোগী মানুষেরা তা মানতে অস্বীকার করে। অন্য দিকে সাধারণ কৃষকও কিছু করতে পারে না। করোনাকালের একটি দৃশ্যের কথা স্মরণ করে বলি— ভুট্টার জন্য সরকারকর্তৃক MSP মূল্য নির্ধারিত করা হয়ে ছিল ১৬৫০টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে, কিন্তু বাস্তবে তা খোলা বাজারে বিক্রয় হয়েছে ৬০০ টাকা ৯০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল হিসেবে। এর কারণ অজানা নয়। প্রথমত সরকারী মান্ডি বন্ধ বা ক্রয় করছে না, দ্বিতীয়ত সাধারণ কৃষকের হাতে কোন আইন নেই। যাবে কোথায়!

সরকারকে MSP তৈরি করে চুপ করে বসে থাকলে কিছু হবে না, তার জন্য MSP-কে সর্বকার্য করার জন্য একটা আইন তৈরি করতে হবে, এবং সেই আইন-কে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে। MSP-এর নীচে কোন ফসলই ক্রয় করা যাবে না, যদি ক্রয় করা হয়, তা আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হবে, এবং সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। খোলা বাজারে একটি প্রশাসনিক ক্যাম্প করতে হবে, কৃষক ও MSP-এর সুরক্ষার খাতিরে। 

কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে সরকারকে নূন্যতম (minimum) বাজার মূল্য বাধ্য না করে, সর্বোচ্চ সহায়ক মূল্য (Maximum Support Price)-এর কথা ভাবতে হবে।

পঞ্চমত) বীজ, সার ও রেশনের ব্যবস্থা। অধিক ফলন, অধিক ফসলের জন্য উন্নতমানের বীজ ও সারের মাহত্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বীজের। চাষের জমিতে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা, উচিত পরিমাণের সার গোবর দেওয়ার পরেও ফলন ফলানো অসম্ভব উপযুক্ত বীজের অভাবে। সাধারণ বীজে যেখানে এক কেজি ফসল উৎপাদিত হয়, সেখানে F1 হাইব্রিট বীজে প্রায় তিন কেজি ফসল উৎপাদন করা সহজ। সাধারণ বীজের ফসল তৈরি হতে প্রায় তিন থেকে পাঁচ মাস সময় লেগে যায়। অন্য দিকে F1 হাইব্রিট বীজে ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল তৈরি হয়ে যায়। তাই বীজের মাহাত্ম কৃষিকাজে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। আর বীজ যেন কোন মতে নষ্ট বের না হয়, তা হলে সব শেষ। এই বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সাধারণ কৃষকের কাছে উন্নতমানের বীজ পৌঁছে দেওয়ার সুব্যবস্থা করতে হবে।

অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ কৃষক বিভ্রান্ত হচ্ছেন, এবং মন খুলে ফসল উৎপাদন করে উঠতে পারছেন না। একজন কৃষক হিসেবে আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাব, কৃষকের প্রয়োজনীয় সার বীজ ও অন্যান্য দ্রব্য অতি অল্প দরে কিংবা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করুন। যেখানে কৃষককে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে অন্তত দুটো মৌসুমে সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষিজ দ্রব্য দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ান।

 

ষষ্ঠত) অত্যাধুনিক কৃষিজ যন্ত্রপাতির সহযোগিতা। বর্তমানে বৈজ্ঞানিকের যুগে বসবাস করে, বিজ্ঞান নির্মিত যন্ত্রপাতির প্রয়োগ ছাড়া সমাজে টিকে থাকা অসম্ভব। তবে একথাও স্বীকার করতে হয়, কিছু কিছু যন্ত্রপাতির মূল্য এতই অধিক যে এক বা দুইয়ের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভবপর নয়, সে ক্ষেত্রে দেশের সরকারকে অবশ্যই হস্থক্ষেপ করতে হবে।

সপ্তমত) সংরক্ষণ, বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেখানে কৃষকের পাশাপাশি সরকারকেও কৃষিজ ফসল বা প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা করবে। এর ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সৃষ্টীয় খাদ্যসংকট কিংবা উচ্চ দ্রব্যমূল্যের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা যখনই বাজারে সংকট ঘটাবে ঠিক তখনই সরকার তার সংরক্ষিত গুদাম খুলে দেবে। এর ফলে বাজার কখনই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠবে না।

দেশকে সামনে রেখে, কৃষকের ভবিষ্যতের কথা ভবে সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কর্তব্য পালন করতে হবে। আমরা আর প্রাণ হারাতে চাই না, যা হচ্ছে তা অসহ্যের হচ্ছে! আর না।

লেখক পরিচিতি:

কানাই চৌহান

গবেষক, বাংলা বিভাগ, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ।

ই-মেইল:  kanaichowhan181@gmail.com

Array

আরও পড়ুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *