সাহিত্যের ম্যারাথন রেসে উড়োমানুষ রবীন্দ্র গুহ

রু ণা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

রবীন্দ্র গুহ না তৎপুরুষ, না তৎসদৃশ পুরুষ, এক তথৈব পুরুষ। এই তথৈব-র তথা ইঙ্গিত দেয় ভারতীয় দর্শনের সেই পুরুষ সত্তা, অভ্যন্তরস্থ বিকাশশীল তৎ, যে অধ্যায় থেকে অধ্যায়ে উত্তীর্ণ হয়, ক্রমান্বয়ে নিজের স্বভাব বদলায় নতু্নের সন্ধানে, যার প্রাণকথা ঠাউর করে বুঝতে হয়, সেই তথ-র আধার তথা, যেখানে উপলব্ধ হয় জীবাত্মা ও পরমাত্মার এক চৈতন্যের ঐক্যজ্ঞান। রবীন্দ্র গুহ সেই তথৈব পুরুষ, যিনি সাহিত্যের value-কে টঙ্কের টঙ্কার তোলা বাজারি মূল্য থেকে change করতে শিল্পের জন্য শিল্পের বিরুদ্ধে নিরন্তর breathless যুদ্ধঘোষণা করেন, যাঁর সাহিত্যযাত্রা কোনো মহাপ্রস্থানের যাত্রা নয় বরং এক বহুদিশাময় জার্নি, ‘দূর-দূরান্তে উড়তা-হুয়া পঞ্ছীর মতো এবং/অথবা, এক প্রান্তিক ইউলিসিসের মতো’। আজীবন unsettling লেখক ও কবি রবীন্দ্র গুহর ভাষাচেতনার রিখটার স্কেলে সর্বদাই ধরা পড়ে জীবনকাঠামোর ক্রমাগত পরিবর্তনশীলতার স্পন্দন। তিনি এমন এক ভাষাসাধক যিনি একমাত্র নিজের কাছে ছাড়া আর কারো কাছে কৃপাপ্রার্থী নন, এমন এক দ্রোহপুরুষ যাঁর দ্রোহ শুধু ক্ষুধার জন্য নয়, অনাচার ও পাপের বিরুদ্ধে নয়, এ এক ডায়াসপোরা লেখকের সেই দ্রোহ, যা আত্মার বিরক্তি নিষ্কুণ্ঠ মানসিকতার প্রতি। রবীন্দ্র গুহই সেই যথার্থ দ্রোহপুরুষ যিনি জীবনের কোনো অর্থ নেই জেনেও মরণপন লড়েন, তাঁর সেই দ্রোহচেতনা উপলব্ধ হয় তাঁর প্রতিটি গল্পে, প্রতিটি উপন্যাসে। 

কিন্তু রবীন্দ্র গুহ কেবল গল্পকার বা ঔপন্যাসিকই নন, তিনি একজন অধুনান্তিক কবিও বটে। তাঁর ‘দিল্লি হাটার্স’ এবং ‘হাসান তারিকের রুপোলি ইলিশ’ কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতার অবয়ব ছড়ানো ছিটোনো গল্পে নির্মিত, কিন্তু তার ভাষা crossing the border─ অন্ত্যজ hybrid শব্দের সঙ্গে জলজঙ্গলের শব্দ, তিক্ত শব্দ, অচ্ছুৎ শব্দের এমন ব্যবহার বাংলা কবিতায় তাঁর আগে কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই। এই শব্দমাহাত্ম্য ব্যক্ত গদ্য আর অব্যক্ত পদ্যের সীমানা ভেঙে, কবিতার গল্পকে ছাপিয়ে নতুন চেতনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যেমন রবীন্দ্র গুহর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘ওঁ উদঘূর্ণা বজ্রযোনি অশ্বক্ষুরধ্বনি ওঁ’, যার মন্ত্রধর্মী ভাষা─ ওঁ দিয়ে শুরু ও শেষ, ব্রহ্মর সেই ওঁ, শব্দের উৎসধ্বনি, carrier of energy, carrier of human knowledge. এ এক আনকোরা শব্দব্রহ্ম, যেখানে অসীম শব্দসম্ভব এক পরিসর, ক্রিয়ার আধেয় রূপকে ধারণ করার জন্য অপেক্ষা করছে শাব্দিক আধার রূপে। কিন্তু এই শব্দব্রহ্ম আসলে ভাষা নয়, ভাষার মাধ্যম। ভাষা এক প্রযুক্তি মাত্র, মানুষের মনোভাববাহী উচ্চারণ, যাকে সে বুদ্ধি দিয়ে বিষয়ীকৃত করে, আর সেই উচ্চারণের মূলে থাকে ধ্বনি, ধারণাবাহী গতিশীল আওয়াজ, যা কেবল sound নয়, বরং অর্থপূর্ণ active sound, যা থেকে শক্তির বিচ্ছুরণ, ব্রহ্মচারীর ওংকার, যার টঙ্কার শোনা যায় রবীন্দ্র গুহর কবিতায়। সুনামীর ঠিক পরবর্তী সময়ে লেখা এই কাব্যগ্রন্থে অশ্বক্ষুরধ্বনির রিদমের ভেতর মানবপ্রকৃতির সঙ্গে পরমাপ্রকৃতির synthesis. ঠিক synthesisও নয়, বরং বলা যায় এ এক dynamic interplay, বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে এমন এক সম্পর্কতরঙ্গ, যা একদিকে ভোগসর্বস্ব মানুষকে সচেতন করছে পরমাপ্রকৃতির রোষ, অন্যদিকে পরমাপ্রকৃতির গুণগান করে মানুষকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে তার আপন আত্মার কাছে। প্রতীকের উপস্থিতি ছাড়াই প্রকৃতির চিহ্ন প্রকাশ করছেন, যেন এক প্রতীকহীন প্রতিরূপকতা, যেন অভিজ্ঞতার অনুরূপ সম্ভাবনার এক ম্যাট্রিক্স, যাকে সক্রিয় করে তুলছেন। এই গদ্যের বিষয় রবীন্দ্র গুহর কবিতা নয়, তাঁর উপন্যাসের ডায়াসপোরা ভাষা। কিন্তু এই অল্প পরিসরে তাঁর সমস্ত উপন্যাস অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়, তাই তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘উড়োমানুষ উপাখ্যান’-কে বেছে নিয়েছি। তাঁর ভাষাচেতনার অন্তরজাত রিদম ‘আমি’ নামক পাঠকটির চিন্তাস্রোতে যে নান্দনিক ধাক্কা দিয়েছে তারই কিছু অনুরণন এই গদ্যে।  

‘উড়োমানুষ’ শব্দটি এমন এক গতিময় সত্তার কথা বলে, যে সাধারণের স্থিতিশীল প্রবাহকে negate ক’রে তার নতুন প্রবাহকে এমন গতিশীল করে দেয়, যাতে পাঠকের অনুভব, চেতনার dynamic dark energy সক্রিয় হয়ে ওঠে। উড়োমানুষ শব্দটিতে সেই dynamicity-র ইঙ্গিত, সেই displacement, যেখানে প্রতিনিয়ত নির্মিত হচ্ছে এক ontological space, যার ভেতর রবীন্দ্র গুহর ডায়াসপোরা সূত্র। ডায়াসপোরা শব্দটা গ্রিক শব্দ diaspeirein থেকে এসেছে যার মানে to disperse, to scatter. এই dispersion বা displacement রবীন্দ্র গুহর জীবন বা জীবনবোধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রবীন্দ্র গুহই বাংলা সাহিত্যের সেই নিয়োলজিস্ট নভেলিস্ট যিনি ডায়াসপোরা বাংলা ভাষার আবিষ্কারক। গল্পের কাঠামো নির্মাণের জন্য, ভিন্নতর পরিবেশ গঠনের জন্য, চরিত্রের সংলাপের জন্য ভাষা আবিষ্কারের নেশায় কেবলই উড়ে গেছেন, ছুটে বেড়িয়েছেন। রবীন্দ্র গুহ বলেন তাঁর কাছে সাহিত্য এক ম্যারাথন রেস। কেবলই চলার মন্ত্র। এই চলায় কখনও ইস্পাত নগরীর খনিখাদান, জলজঙ্গল, আবার কখনও দেখি আরাবল্লী পাহাড় কিংবা রাজস্থানের মরুভূমির রুখাশুখা শূন্যপ্রান্তর, আবার কখনও বা মুম্বাই নগরীর বস্তি। চিরাচরিত বাঙালি পাঠকের নড়বড়ে শেকড় ছিঁড়ে তাকে টেনে নিয়ে গেছেন অচেনা অজানা জগতে। এই চলার মন্ত্রে সমগ্র বিশ্বসংগীতের সুসঙ্গতি ও অসঙ্গতির পরস্পবিরোধী ছন্দ, কেন্দ্রমুখী চলনের উল্টোপথে এ এক কেন্দ্রোৎসারিত চেতনার ইঙ্গিতময় যাত্রা, এক dispersal.

একজন লেখকের দ্বিতীয় জীবনে শিল্পীসত্তাই প্রধান হলেও প্রথম জীবনে তিনি সমাজবদ্ধ মানুষ, তাঁকে ঘিরে থাকে তাঁর সমাজ, পরিবারপরিজন, শিল্পীবন্ধুবান্ধব। রবীন্দ্র গুহ তাঁর এই উড়োমানুষ উপাখ্যানে দুই জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর এমন মেলবন্ধন করেছেন, যে এটা কোনো আত্মজীবনী না হয়ে একটা চলমান উপন্যাস হয়ে উঠেছে। তবে রবীন্দ্র উপন্যাস বলছেন না, বলছেন আখ্যান বা উপাখ্যান, যার স্ট্রাকচার সবসময়ই denarrativized. এ কোনো প্লটমাফিক ড্রিল নয় বরং বলা যায় plotless narrative. একটা গোটা জীবনের জার্নি, সেখানে যেমন লেখকের নিজস্ব উপন্যাস গড়ে ওঠার টুকরো চিত্র, তেমনি এক একজন লেখক বা কবি বন্ধুরাও সামগ্রিক উপাখ্যানের এক একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে। অধুনান্তিক কালখণ্ডের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত আলোড়নকারী তাঁর সেই উপন্যাস ‘শিকঞ্জের পাখি খামোশ’ গড়ে ওঠার প্রসঙ্গ: 

“চূড়া-চামারদের বস্তির নাম ঘাঁটিবস্তি।

দূর থেকে দেখলে গ্রাম বলে ভ্রম হয়। আসলে গ্রাম নয়, গ্রামের মতই অনেকটা। পাহাড়ি সমতলে রুখাশুখা শূন্য প্রান্তর গায়ে গায়ে জড়ানো ফুড়োখানা।

ফসলের চিহ্নমাত্র নেই।

জাঠদের হঠাৎ হঠাৎ ধমক─ ‘কুয়োর ধারে কে? ওয়ঁ পুত্তর, দেখো তো পালি লে রহা কৌন?’

─ অয়ঁ শালু চামার─ উস্‌কা টাং তোড় দোও─

চূড়াদের ছেলে মনু। তাকে দেখলেই বাঁকাচোরা হাসে জাঠেদের মেয়ে লাজু। লাজবন্তি। মন্নুর বুকে ডুগডুগি বাজে।

তাউজির ইশারায় পহেল্‌বান দুজনকেই নির্দয়ভাবে হত্যা করে।

সেই তাউজি, লোলচর্ম, দড়ি-বাঁশের খাটিয়ায় শুয়ে হুক্কা টানে আর মহিষের থলো স্তনের দিকে তাকিয়ে ফুর্তিলা কণ্ঠে বলে, ‘ওয়ঁ হোয়, ঝুমকা ঝুলথ্‌ রে!’

তাউজির অল্পবোজা চোখ। ছেঁড়া ছেঁড়া সতরঞ্চিকাটা চাউনি।

আমাদের দেখলেন। হুক্কার নলটা হাতবদল করলেন।

‘তন্নে কৌন ছে সরকার?’

বললাম, ‘পরদেশী’।

‘কা কাম ছে?’

‘মিলনে আয়া। পরনাম’।

‘আওজি আও, হুক্কা পিঁয়ো!’

তাউজি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, হুক্কার নলে ফুঁক মারতে মারতে, যে পরিগতর স্ত্রীলোকটি মহিষের স্তন মর্দন করছিল, এবং ক্ষণে ক্ষণে শিহরিত হচ্ছিল, তার দিকে তাকাচ্ছিলেন। নবীনা নারী, মহিষটির নিতম্বে হাত বোলাল, তার উবুবসা ভঙ্গি, তৈলন পিঠ ও পাছা উদ্ভাসিত।

তাউজির নজরটি উষ্ণ, এলেবেলে, মারাত্মক।”

(উড়োমানুষ উপাখ্যান, পৃ. ১৭৫)

আরাবল্লীর সমতলে এই সেই গুরুগ্রামের চিত্র─ গুরু দ্রোণাচার্য, দুর্ধর্ষ দুর্যোধন, মহাভারতের কুশিলব আর ভারতযুদ্ধের দাগচিহ্ন লোপাট হয়েছে বটে, তবু সে আজকের গুরগাঁও এর মতো নয়। দুদশক আগের সেই গুরুগ্রাম, যেখানে চারিদিকে ধু-ধু মেরুমাঠ, বের-বাবুলের গেড়, যেখানে বনবিড়াল আর ময়ূর ছোটে, চূড়া-চামারদের নাঙ্গা ছেলেরা পাখির ডিম খোঁজে আর দূরে দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চূড়া-চামারদের টালিখোলার বস্তি, সেখানে গড়ে উঠছে রবীন্দ্রর ‘শিকঞ্জের পাখি খামোশ’ উপন্যাস─ ছোট ক্যানভাসে এক সীমাহীন আকাশ, আরাবল্লী পাহাড় ঘিরে জাঠগুর্জ্জর, চূড়া-চামারদের নিংড়ে মুচড়ে নেয়া নিত্যকার জীবন, জীবন আর সময়ের একটা dialectical contradiction. প্রান্তিক মানুষের প্রেম-দোস্তি, দ্বন্দ্ব লড়াই, তাদের spiritual আর moral সংকটের চিত্র অভূতপূর্বভাবে তুলে ধরতে ব্যবহার করছেন হরিয়ানভি ভাষা। এই যে ভাষা চরিত্র আর পরিবেশ, এই তিনটে উপাদানেরই অবস্থান বাংলাসাহিত্যের বিনোদিনী অভিজ্ঞতার বাইরে। বাংলায় লেখা উপন্যাস অথচ বাঙালির নয়। বাঙালির গণ্ডির বাইরে এক জগতের কথা বলছেন, যেখানে বাঙালি সমাজ নেই, তার মিথ নেই, তার সংস্কৃতি নেই, বাঙালির ত্রিকোণ প্রেম আর হারজিতের লড়াই নেই, ভাতঘুমের আয়োজন নেই, অবসর বিনোদনের চাহিদা নেই। ভিন্ন পরিবেশের মানানসই চরিত্র আর চরিত্রের মানানসই পরিবেশ এই দুটোর মধ্যে এক অসামান্য টিউনিং তাঁর ভাষায়। ভাষাটা পরিবেশের মধ্যে এমনভাবে ঢুকে পড়ছে যে দুটোরই চরিত্র যেন একইসঙ্গে নির্মিত হচ্ছে। আর লেখক সর্বত্র নিজেকে নিহিত রেখে ফিল্ড রেকর্ডিং করে চলেছেন। এ যেন এক বৈজ্ঞানিকের observation, চরিত্রগুলোর multidimensional radiation এর লিপি, যার diverging ray বিদ্ধ করছে পাঠককে। একদিকে চরিত্রগুলোর নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রেম দয়া মায়া সংযম নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে নিজস্ব আর্থসামাজিক পরিবেশে তাদের ঘৃণা ক্রোধ অবিশ্বাস অশ্লীলতার এক জীবন্ত উপস্থাপনা। পাঠককে এমন এক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় যে তার অবাক বিস্ময় দেখে কীভাবে চরিত্রগুলো লেখকের হাতের ক্রীড়নক না হয়ে তাদের নিজস্ব পরিবেশে তারা নিজেরাই পারফর্মার হয়ে উঠছে। এই সেই রবীন্দ্রভাষার দ্রোহচেতনা, যা একচেটিয়া cultural homogenization অস্বীকার ক’রে, বিশ্বের বিদ্যমান বৈচিত্র্য স্বীকার ক’রে মানুষের সামগ্রিক সাম্যের ধারণায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর এই নতুন ডায়াসপোরা প্রান্তিক মানুষের আঞ্চলিকতা, সাংস্কৃতিক ভিন্নতার ভারসাম্য রক্ষাকে এড়িয়ে যায় না, বরং স্বীকার করে সমস্ত মানুষের সমমর্যাদা ও সমউপস্থিতি।

উড়োমানুষ উপাখ্যানে রবীন্দ্র গুহর সেই ‘সূর্যের সাত ঘোড়া’ উপন্যাসের প্রসঙ্গ, শিল্পাঞ্চলের পরিবেশে সাড়াজাগানো নিম উপন্যাস, যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে গেম অফ্‌ পাওয়ারের খেলা:

“রুশিরা আসছে ঝাঁক ঝাঁক─ ‘দোব্‌ড়ে উতরা─ দোব্‌ড়ে উতরা তভারিশ─ সুপ্রভাত─ সুপ্রভাত বঁন্‌ধু’।

চিমনির চূড়ায় উঠে শিউনাথ নদীর দিকে তাকাই… জমি দখল হচ্ছে। ডোজার ডাম্পার ধেয়ে আসছে। গ্রামবাসী ছুটে আসছে─ ‘নহি─ হাম্‌রে জমিন্‌ নহি দেঙ্গে’!

রুনবেল সাহেব ক্ষিপ্ত। হুঙ্কার দিচ্ছেন─ ‘হঠ যাও, হঠ যাও’!

ঠেঠোয়া, কুঁয়ার, কেয়র্ত গ্রামবাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ডোজারের মুখে।

রুনবেল সাহেব আওয়াজ দিচ্ছেন যথারীতি─ ‘হঠ যাও, হঠ যাও’!

‘নো, আই প্রোটেস্ট’!

কে? কে বলল কথাটা?”

                                  (উড়োমানুষ উপাখ্যান, পৃ. ৮৮)

উন্নয়ন ও শিল্পায়নের যোগসূত্রের সঠিক শেকড় খুঁড়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পরিবেশে ইন্টারন্যাশানাল মানুষের সমাবেশে তাদের চরিত্র আর প্রাকৃতিক ধর্ম, শ্রমিকদের ভয়ংকর স্পর্শকাতরতা, নিত্যদিনের জটিল জীবন, তাদের হাহাকার, তাদের দুঃখবোধের নিখুঁত নির্ভরযোগ্য চিত্র গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করছেন ভিলাইভাঁটার ভাষা, রাশিয়ান ভাষা। রবীন্দ্র গুহ কার্পণ্য করেননি শব্দ আহরণে। ইস্পাত কারখানা তৈরির ব্যাকগ্রাউন্ডে ইন্ডাস্ট্রিয়াল শব্দ ব্যবহার করছেন, কিন্তু তারা নির্জীব নয়, ক্লান্তিকর নয়। যদিও আমরা জানি যন্ত্র সবসময়ই যান্ত্রিক। কিন্তু রবীন্দ্র গুহর অসামান্য কলম যন্ত্র ও মানুষে সংপৃক্ত যে যান্ত্রিক পরিবেশ; তাকে ঘিরে যে জীবন, যে সমাজ সংস্কৃতি আর তার ওপর নির্ভর করা যে অস্তিত্বের লড়াই তারই শিকড়সন্ধান করছেন, তার জন্য গড়ে তুলছেন এক নতুন ডায়াসপোরা বাংলাভাষা, যেখানে অজৈব শব্দগুলো জৈব হয়ে নিজেদের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে নিচ্ছে।

আমি রবীন্দ্র গুহ বলি না, বলি রবীন্দ্র দ্রোহ। এমন এক মানুষ যিনি গোটা জীবনে কোথাও আপোষ করেননি, দেয়ালে ঠেস দিয়ে বিশ্বভ্রমণ করেননি, সৌন্দর্য্যকে গ্রহণ নয়, বরং গ্রাস করেছেন, যেখানে শব্দদ্রোহ, শব্দচেতনাই তাঁর অস্ত্র, যেখানে সাহিত্যের মান সেই শব্দের ওপর নির্ভর করে না, করে সেই শব্দমাহাত্ম্যের ওপর, যা নির্ণিত হয় পাঠকের উপলব্ধিগত বা ধারণাগত অভিজ্ঞতাকে কতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারে তার ওপর। আর এই শব্দসাধনাই তাঁর ডায়াসপোরা ভাষাকে করেছে দ্রোহময়। এই দ্রোহ নৈতিকতায় আবদ্ধ সৌন্দর্য্যচেতনা নয়, বরং তার শিকড় উপড়ে কষ্টে যন্ত্রণায় ক্রোধে নরকে নর্দমায় গিয়েও নিজেকে খুঁজছে, অবিকৃত অভিজ্ঞতার গনগনে রোদে পুড়ছে, মানুষের রক্ত-ঘাম-অশ্রুর যে ক্ষরণ তার নিষ্ঠুর আগুনে ঝলসে যাচ্ছে, তবু আবেগ বা সমাজসংস্কারের দায়বদ্ধতা মানে না। জীবনের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের জীবনসত্যের প্রতি যে দায়বদ্ধতা সেটাই এই দ্রোহপুরুষকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী দক্ষতা। 

রবীন্দ্র গুহর ডায়াসপোরা বাংলাভাষার আবিষ্কার প্রথম শুরু হয়েছিল তাঁর ‘নাভিকুণ্ড ঘিরে’ উপন্যাসে, যেটাকে পৃথিবীর প্রথম নিম উপন্যাস হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল নিম সাহিত্য পত্রিকা। উড়োমানুষ উপাখ্যান থেকে এই অসাধারণ বিজ্ঞাপনের বয়ান:

পৃথিবীর প্রথম নিম উপন্যাস

যৌবনের ব্যাখ্যা নেই কার্যকারণের বাধ্যবাধকতা নেই নীতিযৌক্তিকতা নেই যৌবন তাই ডায়ালেকটিক্যাল যৌবন অবস্তুবাদী অহরহ বুকের ভিতর স্বপ্নের ভিতর সুখের ভিতর দুঃখের ভিতর যন্ত্রণার ভিতর তৃষ্ণা নিয়ে ক্ষুধা নিয়ে ফুল নিয়ে শূন্যতা নিয়ে সুগন্ধিত নিঃশ্বাস নিয়ে নাভিকুণ্ড ঘিরে হিংস্র পরবশতায় দুর্ধর্ষ দুর্বিসহ দুঃসাহসিকতায় নাভিকুণ্ড ঘিরে ব্যথায় মুগ্ধতায় রক্তধারায় চূড়ান্ত অনাত্মীয়তায় বন্যতায় সাধুতায় আঁতাতহীন ভালোবাসায় উগ্র-উৎকণ্ঠায়─

‘নাভিকুণ্ড ঘিরে’

       (উড়োমানুষ উপাখ্যান, পৃ. ১০৮)

এ সেই সত্তর দশক, যখন হাংরি অবলেখ শেষ, নিম সাহিত্য শুরু। Establishment এর মুখে লাথি কষিয়ে হইহই করে শুরু হওয়া নিম সাহিত্য আন্দোলন─ “অচিরাচরিত, প্রথাবিহীন। জীবনের অনিবার্য অর্থ খোঁজার দিন শেষ। নিজের সৃষ্টিধারা নিজেই রচনা করে, নিজেই ধ্বংস করে”। এই সেই নিম সাহিত্য আন্দোলন, যার পরিচালনায় ছিলেন রবীন্দ্র গুহ, সুধাংশু সেন, বিমান চট্টোপাধ্যায়, মৃণাল বণিক, নৃসিংহ রায় আর অজয় নন্দীমজুমদার, যার ম্যানিফেস্টোর প্রথম মন্ত্র ছিল─ সাহিত্য অভিজ্ঞতার ফল নয়, অবিকৃত অভিজ্ঞতাই সাহিত্য। এই মন্ত্র আজও উপলব্ধ হয় রবীন্দ্র গুহর উপন্যাসের প্রতি ছত্রে আর তাঁর ভাষায় তাঁর জীবনবোধে অনুরণিত হয় অস্তিত্বের অবিরাম হা-হা আর্তনাদ। উড়োমানুষ উপাখ্যানে এই নিম আন্দোলনের টুকরো চিত্র:

“পরদিন এল ওরা─ মৃণাল, বিমান, নৃসিংহ, সুধাংশু। সবার চেহারা ছবি আলাদা আলাদা। আত্মধ্বংসের ছায়া বর্তমান। প্রত্যেকের জিভের শব্দশস্য অদ্ভুত। শুরুতেই আমি জানতে চাইলাম, 

‘তোমরা কি স্থাবিরোধী?’─ ন্না।

‘নতুন রীতিতে বিশ্বাসী?’─ ন্না।

‘অতিচেতনায় বিশ্বাসী?’─ ন্না।

‘হাংরি শ্রুতি শাস্ত্রবিরোধী ধামাকায় বিশ্বাসী?’─ ন্না।

‘তবে তোমাদের মহা সত্যটা কী?’

‘মগজ হাতুড়ি বিষপাথর’।

‘তোমাদের বুকের পকেটে কী’

‘শিল্পহীনতার ধনরাশি, ক্রোধ, হিংসা, বিস্তর ঘৃণা, বিস্তর ভাইরাস, কালঘাম, বজ্রতেজ!’

‘তোমাদের প্রথম শর্তটা কী?’

‘শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা!’

‘আর?’

‘আর আপনি আমাদের চিত্ত চালনদার─ মগজ, মেরুদণ্ড, পাকস্থলী, ফুসফুস। এমন একটা নাম বলুন যা বোধের মুখে নাইট্রিক অ্যাসিডের মতো’।

‘যদি বলি─ নিম সাহিত্য। অবশ্যই একটা লেজুড় থাকবে─ না-সাহিত্য, অল্প-সাহিত্য, তিক্তবিরক্ত সাহিত্য─’

তালঢ্যাঙা লোকটা বলল, উঁহু, ওটা লেজুড় নয়, টিকি’।

ব্যস, হয়ে গেল। মেরুদণ্ড ঝাঁকাল মৃণাল।” 

                                         (উড়োমানুষ উপাখ্যান, পৃ. ১০৬)

উড়োমানুষ উপাখ্যানে শুধু তাঁর উপন্যাস গড়ে ওঠার কথাই নয়, তাঁর কবিবন্ধুরাও এক একটি চরিত্র হয়ে গড়ে তুলছে এই আখ্যান। সেখানে একদিকে যেমন এসেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুবিমল বসাক, সন্দিপন চট্টোপাধ্যায়, আলোক সরকার, উত্তম দাস, কমল চক্রবর্তী, বারীন ঘোষাল, মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী, উৎপল কুমার বসু, তেমনি দিল্লীর কবিবন্ধুরা যেমন দীপঙ্কর দত্ত, দিলীপ ফৌজদার, গৌতম দাশগুপ্ত,‌ শহর পত্রিকার অজিত রায়, জিরো আওয়ারের অরূপ চৌধুরী। এইসব বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই শুধু নয়, তাঁদের প্রত্যেকের ধ্যানধারণা, সৃষ্টিকলার এমন টুকরো টুকরো চিত্র এঁকেছেন, যাতে সেই মানুষটির জীবনবোধ আখ্যানের চরিত্র হয়ে ধরা দেয় পাঠকের কাছে। যেমন হাংরি আন্দোলনের হোতা সেই মলয় রায়চৌধুরীর প্রসঙ্গ:

“মলয় বলত, ‘আমি চাই, কবিতা আরো কবিতার কথা বলুক, বঞ্চনার কথা বলুক, তীব্রতর ঝাঁজ ফুটুক কবিতায়। অশিক্ষিত অশ্লীল ভাষা আসুক। আমাদের জীবনের সমস্ত রক্ত-পুঁজ-তাপ-উত্তাপ নিয়ে কবিতা। ধর্মকে কবিতা থেকে দূরে রাখতে হবে। ধর্ম একটি বিশাল যৌনগহ্বর’

শুরু হল হাংরি আন্দোলন। বাংলা সাহিত্যের ভিত কেঁপে উঠল।

নিয়মের বাইরে সাহিত্য! নিয়মীরা ফাঁদ পাতল।

হাংরিপন্থীদের অনেকের মুণ্ডু কাটা হল।

প্রদীপ চৌধুরীকে রাস্টিকেট করা হল শান্তিনিকেতন থেকে। হাংরির প্রথম ক্যাজুয়ালটি উৎপলকুমার বসুকে তাঁর অধ্যাপনার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল।

সমীর রায়চৌধুরীকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হল।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখকরা একজোট হয়ে সুবিমল বসাককে সদর রাস্তায় বেধড়ক পেটাল। অশ্লীল কবিতা লেখা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য মলয় পাটনায় গ্রেপ্তার হল। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া থেকে চাকরি চলে গেল। বাংলা সাহিত্যে একজন কবির কোমরে দড়ি এবং হাতে হাতকড়া এই প্রথম।”                

(উড়োমানুষ উপাখ্যান, পৃ. ১৪৩, ১৪৪)

এই সেই মলয় রায়চৌধুরী, যাকে ‘বাংলা সাহিত্যের ময়দানে কমন্‌ এ্যানিমি’ বলছেন রবীন্দ্র গুহ। এই সেই বিখ্যাত কবিতা ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ যা অশ্লীল বলে অভিযুক্ত হয়েছিল, কিন্তু মলয় যখন ব্যারিস্টার করুণাশঙ্কর রায়ের অনুরোধে কবিতাটির দর্শন-ভাবনা লিখে দিলেন, তখন সমস্ত উকিল সেই নজরবিহীন রচনা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিল, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে যার ইংরেজি অনুবাদ হয়েছিল ‘Stark Electric Jesus’ নামে। মিথ্যের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে মলয় রায়চৌধুরী চিরকাল একা একা যুদ্ধ করেছিলেন, রবীন্দ্র গুহর ভাষায়, “এই যুদ্ধ ১৯৬২ থেকে। তুলকালাম আত্মহত্যা থেকে। যুদ্ধ চলতি সংস্কারের বিরুদ্ধে, অনৈতিক তত্ত্বের বিরুদ্ধে, বিপন্ন পচা স্থিতিবোধের বিরুদ্ধে। অজ্ঞাতবাসে গিয়েও এ লড়াই জারি ছিল”।

প্রচলিত আখ্যানের ফর্মভাঙা এই উড়োমানুষ উপাখ্যানের পাঠক কে? যেসব মানুষ ব্যক্তিগত ইচ্ছার সঙ্গে সমাজগত অন্বয় খোঁজে, উদারচেতা, বিদগ্ধ, ভয়ঙ্করকে বহন করার ক্ষমতা রাখে তারাই রবীন্দ্র গুহর পাঠক─ দীক্ষিত পাঠক, যে micro-viewership জানে, কারণ micro level-এ একটা একটা করে শব্দ সাজায় লেখক, যাতে সেটা macro-view-তে একটা কোলাজ বলে মনে হয়। বাংলাভাষার সঙ্গে রাজস্থানি, মারাঠি, হিন্দি, ছত্রিশগড়ি, হরিয়ানভি ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষার জোড়শব্দগুলো তৈরি করে এমন এক কোলাজ, যার dynamics ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে, আর নতুন জোড়শব্দটি দ্বিধাগ্রস্ত পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় বিশ্বরূপ দর্শনের সামনে। পাঠকৃতির ভেতর এমন এক স্পেস খুলতে থাকে যা পাঠককে দেয় উপলব্ধির স্বাধীনতা। এমন এক অনির্ণেয় বাকশষ্য যা আনকোরা, বিস্ময়কর, ভিন্নধর্মী, সংকেতপ্রধান। 

এই নতুন ডায়াসপোরা ভাষার দুরন্ত গতি পাঠককে টেনে নিয়ে যায় এক অন্য জগতে, যে জগতের মাটি মানুষ জলজঙ্গলের মৌলিক অবস্থানগুলি নিজেদের দ্রোহচেতনা ছড়িয়ে দেয় পাঠকের অনুভবে। সমাজের পিছাড়ি বর্গের মানুষ তাদের আঁছাটা বিঘ্নিত জীবন, উদ্ভট আচার, আউলা স্বভাব, তাদের দুঃখ বেদনা ক্রোধ ভালোবাসার অশ্রুক্ষরণ পাঠকের উপলব্ধিতে ধরা দেয় তার নিজের হয়ে। যারা ধোঁয়াধুলো মাখা মানুষ, জলজঙ্গলের মানুষ, যারা আত্মনিয়ন্ত্রণহারা, তাদের হিংসা যৌনবোধ ভয় আতঙ্ক যুদ্ধস্পৃহা, তাদের রক্তঘাম পাঠকের শিরায় শিরায় নিঃশব্দ রক্তক্ষরণ ঘটায়। এভাবেই প্রত্যক্ষ জীবনপাঠ রবীন্দ্র গুহর উড়োমানুষ উপাখ্যানে।

বর্তমানে অশীতিপর এই যুবা লেখক এখনও পথে-প্রান্তে নিরন্তর নতুন পশরার অনুসন্ধানী, তাঁকে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় একজন ব্যতিক্রমী নক্ষত্র বলছেন এই উড়োমানুষ উপাখ্যানের প্রকাশক পূর্ণেন্দু শেখর মিত্র। চলমান জীবনের নিভৃত পর্যটক রবীন্দ্র গুহ যথার্থই বলেছেন তাঁর কাছে সাহিত্য এক ম্যারাথন রেস। একদা অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশাল থেকে যে চলমানতার শুরুয়াৎ, সেই জীবনজার্নি স্থা বিরোধী রবীন্দ্র গুহর সাহিত্যজার্নির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা কেন্দ্র ভেঙে ফেলার, ক্ষমতাকে প্লেন ক্র্যাশ করানোর, মূলধারা ধূলিসাৎ করার স্বপ্ন দেখায়─ নোয়াম চমস্কির সেই অ্যানার্কিজম্‌─ “I think it only makes sense to seek out and identify structures of authority, hierarchy, and domination in every aspect of life, and to challenge them; unless a justification for them can be given, they are illegitimate, and should be dismantled, to increase the scope of human freedom.” মানুষের এই স্বাধীনতার খোঁজ রবীন্দ্র গুহর সমস্ত রচনায়, তাঁর আজীবনের চ্যালেঞ্জিং জার্নির আরো একটি মূর্তিমান রূপ তাঁর ‘উড়োমানুষ উপাখ্যান’। সমাজের বিকৃতি আর বিনাশের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর নিরন্তর আত্মপরিক্রমা। তাই আত্মার আর্তনাদ তাঁর ভাষাচেতনার অন্তরমহলে, দূষণমুক্তির খোঁজ তাঁর আখ্যানে। লেখক তাঁর আপন মনের স্বাধীনতায় ও চেতনার প্রঘাতে, জীবনের বিস্তৃত অভিজ্ঞতার পরিসরে, জীবনের স্বপ্নের সঙ্গে অস্তিত্বের সমর্থনে উন্মোচন করে চলেছেন multidimensional reality-র সম্পর্ক, যার গভীর অভিব্যক্তি ভালোমন্দের দ্বৈততায়, সুখদুঃখের ছন্দে, জীবনমৃত্যুর অন্তহীন চক্রে উদ্ভাসিত, যেখানে নির্দিষ্টতার গণ্ডিভাঙা post-postmodern indeterminism. রবীন্দ্র গুহর আখ্যানে তাই recreation of reality অথবা বলা যায় reality পেরোনো hyperreality, যেখানে জারি থাকে সর্বোৎক্রান্তি পন্থার খোঁজ। 

সহায়ক তথ্যপঞ্জি:

১। উড়োমানুষ উপাখ্যান, রবীন্দ্র গুহ, দূর্বা প্রকাশনী, ২০২০।

২। কেন লিখি কিভাবে লিখি, রবীন্দ্র গুহ, কবিতা ক্যাম্পাস, ২০১২।

৩। সূর্যের সাত ঘোড়া, রবীন্দ্র গুহ, দিগঙ্গন প্রকাশনী, দিল্লী, ১৯৯৯।

৪। শিকঞ্জের পাখি খামোশ, রবীন্দ্র গুহ, শহর পাবলিকেশন, ২০০১।

৫। Noam Chomsky on Anarchism, Marxism & Hope for the Future, an interview by Kevin Doyle, May 1995, http://www.ditext.com/chomsky/may1995.html 

লেখক পরিচিতি:

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, পশ্চিমবঙ্গ। 

ই-মেইল— runab2000@gmail.com

আরও পড়ুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *